ঢাকা, বুধবার ৮ই মে ২০২৪ , বাংলা - 

সুপ্রিমকোর্টে সভাপতি ঘোষণা নিয়ে হট্টগোল

স্টাফ রিপোর্টার।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2021-05-09, 12.00 AM
সুপ্রিমকোর্টে সভাপতি ঘোষণা নিয়ে হট্টগোল

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন সমিতির (বার অ্যাসোসিয়েশন) গত দুই মেয়াদে সভাপতি ছিলেন। তিনি এখন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা (অ্যাটর্নি জেনারেল)।সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বিশেষ সাধারণ সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সাবেক সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিনকে ফের তৃতীয়বারের মতো সভাপতি নির্বাচিত করার ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা। গত ৪ মে দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে সিনিয়র সহ-সভাপতি শফিক উল্ল্যার সভাপতিত্বে এ ঘোষণা দেয়া হয়। তবে সভা শুরুর পর এতে সভাপতিত্ব কে করবেন তা নিয়ে হৈচৈ, হট্টগোল ও বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন কার্যনির্বাহী কমিটিভুক্ত আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থক পক্ষের আইনজীবীরা। এরপর সেই সভা মুলতবি করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টারর রুহুল কুদ্দুস কাজল।

এর পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনকে সভাপতি ঘোষণা করে তাকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানানো অব্যাহত রেখেছেন আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা। কিন্তু এখানে বাধ সেধেছেন সুপ্রিম কোর্টের বিএনপি ও জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা। তারা সেটি মানতে রাজি নন। এরই ধারাবাহিকতায় তারা প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন করেছেন।

তারা দুইবারের সাবেক সভাপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনকে সভাপতি হিসেবে মানবেন না। আর আওয়ামী পন্থী আইনজীবীদের পক্ষ থেকে আমিন উদ্দিনকে সভাপতি ঘোষণার বিষয়টি প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত তাদের অনাস্থা ও প্রতিবাদ অব্যাহত থাকেবে বলেও দাবি তুলেছেন বিএনপির জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতারা।

ইঘচ-১.লঢ়ম

বিএনপির জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ব্যানারে রোববার (৯ মে) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনের চত্বরে এমন প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করেন বিএনপি পন্থী আইনজীবীরা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তৈয়মুর আলম খন্দকার।

এ সময় তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল ও বারের সাবেক দুইবারের সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিনকে সভাপতি ঘোষণার বিষয়টি প্রত্যাহার না করলে আমরা আমাদের প্রতিবাদ অব্যাহত রাখবো। এমনকি রুহুল কুদ্দুস কাজল যদি আমিন উদ্দিনকে বারের সভাপতি মানেন, প্রয়োজনে তাকেও দল থেকে (বিএনপি) বহিষ্কার করা হবে।’

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক আবেদ রাজা। প্রতিবাদ সভায় আরও বক্তব্য দেন আইনজীবী মোহাম্মদ আলী, রাগিব রউফ চৌধুরী, রফিকুল ইসলাম মন্টু, আবদুল্লাহ আল মাহবুব, রেদওয়ান আহমেদ রানজিব, শাহাজাদী কোহিনুর পাপড়ি, নূরে আলম সিদ্দিকী সোহাগ, আনিসুর রহমান রায়হান, মোস্তাফিজুর রহমান আহাদ। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মোহাম্মদ আলী, সগীর হোসেন লিয়ন, ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমানসহ অর্ধশতাধিক আইনজীবী।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ এপ্রিল সমিতির গঠনতন্ত্রের ১৬ অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে সভাপতির শূন্যপদ পূরণের করণীয় নির্ধারণ করতে সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল এই বিশেষ সাধারণ সভা আহ্বান করেন। এ সভায় এক তরফা ঘোষিত মৌখিক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তৃতীয়বারের মতো সভাপতি করা হয় অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনকে।

তারও আগে গত ১০-১১ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বার্ষিক নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু। করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন গত ১৪ এপ্রিল মারা যান তিনি। এর ফলে সভাপতির পদ শূন্য হয়।

ইঘচ-১.লঢ়ম

নির্বাচনে সমিতির মোট ১৪টি পদের মধ্যে আটটি পদে জয়ী হয় বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সমর্থিত প্যানেল পায় ছয়টি পদ।

গত ৪ মে অনুষ্ঠিত বিশেষ সাধারণ সভা শুরু হলে সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল ঘোষণা দেন যে, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিনি সভা পরিচালনা করবেন। সঙ্গে সঙ্গে সমিতির সহ-সভাপতি মুহাম্মদ শফিক উল্ল্যা মঞ্চে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দেন, তিনি সভার সভাপতিত্ব করবেন। এর বিরোধিতা করে কাজল বলেন, আপনি সভায় সভাপতিত্ব করতে পারেন না। আরেকজন সিনিয়র সহ-সভাপতি আছেন।

তখন শফিক উল্ল্যা বলেন, আমিই আজকের সভার সভাপতি। এরপর তিনি ঘোষণা করেন, এখন থেকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নতুন সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন। আওয়ামী সমর্থক আইনজীবীরা করতালির মাধ্যমে তাকে সমর্থন করেন।

অন্যদিকে, বিএনপির আইনজীবীরা ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। এক পর্যায়ে সমিতির সম্পাদক কাজল সভা মুলতবি ঘোষণা করেন। এর পরও কিছুক্ষণ মিলনায়তনে দু’পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে হাতাহাতি ও হট্টগোল চলে।

পরে বিকেলে দু’পক্ষই সমিতির প্যাডে আলাদা সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয়। কাজলের দেয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আহূত বিশেষ সাধারণ সভা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কোনো আলোচনা ও সিদ্ধান্ত ছাড়াই পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করা হয়েছে।

পাল্টা বিজ্ঞপ্তিতে সহ-সভাপতি মুহাম্মদ শফিক উল্ল্যা জানান, তার সভাপতিত্বে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বিশেষ সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। তিনি সমিতির সভাপতি পদে এ এম আমিন উদ্দিনের নাম প্রস্তাব করলে উপস্থিত সদস্যরা করতালি ও কণ্ঠভোটে তার প্রস্তাবকে সমর্থন করেন।পরে অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, তিনি শুনেছেন যে, বিশেষ সাধারণ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সভাপতি হিসেবে তার নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তাকে যদি আবারও সভাপতি নির্বাচিত করা হয়, গত দুই বছরের মতোই বারের উন্নয়ন কাজ করে যাবেন বলে ঘোষণা দেন তিনি।