ঢাকা, শনিবার ৪ই মে ২০২৪ , বাংলা - 

‘উদরপিন্ডি বুধোর ঘাড়ে’ চাপাতে চেষ্টা সরকারের

স্টাফ রিপোর্টার ।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2023-12-09, 12.00 AM
‘উদরপিন্ডি বুধোর ঘাড়ে’ চাপাতে চেষ্টা সরকারের

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, গুম, খুন, লুটপাট, ভোট ডাকাতি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার, চাপাবাজি, মিথ্যাবাজি, সীমাহীন মূল্যস্ফীতি, ধোঁকাবাজির  হাত থেকে কেউ রেহায় পেতে এবং  আগেই নিজের চামড়া বাঁচানোর জন্য এখন ‘উদরপিন্ডি বুধোর ঘাড়ে’ চাপানোর ফন্দি আটছে সরকার। আজ শনিবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিনা ভোটের সরকার দেশের সমস্ত সম্পদ লুটপাট করে রাজকোষ শেষ করেছে। আমদানি করার মত ডলার নাই। এলসি বন্ধ। সব টাকা বিদেশে পাচার করেছে। ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশী ঋণের পাহাড় আর ১৫ বিলিয়ন ডলারের তলানীতে রিজার্ভ নামিয়ে এখন কমেডি করছেন রাষ্ট্র পরিচালনায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ নিশিরাতের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল কোটালীপাড়ায় বলেছেন, বিএনপি মার্চের দিকে দেশে দুর্ভিক্ষ ঘটাবে। এটা হচ্ছে তাদের পরবর্তী পরিকল্পনা। এটা শুধু দেশের নয়, বাইরের দেশেরও পরিকল্পনা। যেভাবেই হোক দুর্ভিক্ষ ঘটাতে হবে। বিনাভোটে ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রক্ষমতার ময়ুরসিংহাসন দখলে রেখে শেখ হাসিনা দেশকে উন্নয়নের গল্প শুনিয়ে আর দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার গলাবাজি করে এখন বলছেন দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করবে বিএনপি!! কি হাস্যকর কথা! বাংলাদেশের মানুষকে শেখ হাসিনা এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা ভাবেন বোকা, অবুঝ-নাদান মূর্খ।

গুম, খুন, লুটপাট, ভোট ডাকাতি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার, চাপাবাজি, মিথ্যাবাজি, সীমাহীন মূল্যস্ফীতি, ধোঁকাবাজির  হাত থেকে কেউ রেহায় পেতে এবং  আগেই নিজের চামড়া বাঁচানোর জন্য এখন ‘উদরপিন্ডি বুধোর ঘাড়ে’ চাপানোর ফন্দি আটছে সরকার। শেখ হাসিনা দেশের ভয়াবহ অর্থনৈতিক দেউলিয়াত্বে অসহায় হয়ে পড়েছেন। নিজের অপব্যবস্থাপনা আর ব্যর্থতা ঢাকতে বিএনপি ও বিদেশিদের উপর অগ্রিম দোষ চাপানোর চেষ্টা করছেন। শাক দিয়ে মাছ কি ঢাকা যায়? ইতিমধ্যেই শেখ হাসিনার অপশাসনে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, দেশটাকে লুটেলুটে খেয়ে দুর্ভিক্ষের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। অনাহার, ধ্বংস আর তাদের পাপের হাত থেকে প্ররিত্রান পেতে এই মুহুর্তে এক ব্যাপক গণ-আন্দোলন সৃষ্টি করতে হবে।

তিনি বলেন,  অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, তিন মাস চলার মতো রিজার্ভ অবশিষ্ট আছে। তারপর দেউলিয়া ঘোষণা করা ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না। সারাদেশে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে।”

আসলে আওয়ামী লীগ আর দুর্ভিক্ষ একে অপরের পরিপূরক। আওয়ামী লীগ মানেই দুর্ভিক্ষ আর দুর্নীতি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশে দূর্ভিক্ষ আনে। ৭৪’ সালে যেভাবে দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল আওয়ামী লীগের দুর্নীতি লুটপাট টাকাপাচার অবিচার অনিয়মের কারণে দেশে এখন আবারো সেই দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি। সব রকমের নৈতিক অনাচার সৃষ্টিকারী দল আওয়ামী লীগ। এরা দস্যুতামূলক বলপ্রয়োগের দ্বারা জনগণকে দমন করে রাখতে চায়। আওয়ামীলীগ হলো নিতান্তই কুৎসীত, বিদ্বেষ, আধিপত্যলিপ্সা, নিষ্ঠুরতা এবং দুর্ভিক্ষসহ দেশকে বিষাক্ত করে তোলার দল। যদি দুর্ভিক্ষ আসে তাহলে সেটা হবে শেখ হাসিনার একনায়কতন্ত্র ও জুলুমের ফসল। ৭৪’ এর দুর্ভিক্ষে রাষ্ট্রের বাসন্তী ও দূর্গাদের কথা জাতি ভুলে যায়নি। আওয়ামী বাকশালিরা নিজেদের আরাম আয়েস ভোগ বিলাসের কারনে ৭৪ এর দূর্ভিক্ষে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলো। কলা পাতায় দাফন হয়েছিল। মাছ ধরার  জাল পড়ে এদেশের মা-বোনদের লজ্জা নিবারণ করতে হয়েছিল। এখন শেখ হাসিনার দুঃশাসনের বাকশাল ২.০ ভয়াবহ সময়ে অসংখ্য  বাসন্তী-দূর্গারা ঘুরছে পথেঘাটে। মানুষ তিন বেলা খাবার জোটাতে পারছে না। ক্ষুধার জ্বালায় ত্রিশ হাজার টাকায় সন্তানকে বিক্রি করেছে মা। তাই এক্ষুনি এই সর্বভূক লুটেরা খুনি দুঃশাসক দুরাচারী সরকারকে হঠাতে না পারলে দুর্ভিক্ষ-মন্বন্তরে প্রাণ হারাতে হবে বেঘোরে। পথে ঘাটে পড়ে থাকবে লাশের সারি।

তাই আজ  ভোটাধিকার, সরকারের গুম-খুন-অপহরণ-জুলুম-নির্যাতন, অন্যায়-অবিচার, লুটপাট ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দেশের জনগণ রাজপথে মরনপণ লড়াই করছে। এই লড়াইয়ে আমাদের জয়লাভ করতেই হবে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আগামীকাল বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। মানুষকে গুম খুন অপহরণ করে, গোপন বন্দীশালা 'আয়নাঘর' বানিয়ে, কারারুদ্ধ করে বিনাভোটে দেড় দশকের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে রেখে শেখ হাসিনা মানবাধিকার ভুলুন্ঠিত করেছেন। আন্তর্জাতিক তদন্ত এবং সমালোচনা সত্ত্বেও, সরকার ক্রমাগত মানবাধিকার লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। অবরুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরী করা হয়েছে। একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার হিসাব অনুযায়ী দেড় দশক ধরে এই পর্যন্ত বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ৬৪৭ জন ব্যক্তি গুম হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৮৪ জনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে, ৩৯৯ জনকে জীবিত ফেরত পাওয়া গেছে অথবা গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, ৩ জনের বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোন তথ্য পাওয়া যায় নাই এবং ১৬১ জনের এখনো পর্যন্ত কোন খ্জোঁ পাওয়া যায়নি। এদের মধ্যে এম ইলিয়াস আলী ও সাইফুল ইসলাম হিরুর মতো সংসদ সদস্য, কাউন্সিলর চৌধুরী আলম, হুমায়ূন পারভেজ, জাকির, সুমন, দিনার, জুনেদসহ অসংখ্য বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল নেতাকে অদৃশ্য করা হয়েছে। যদিও, আমাদের হিসেবে-প্রকৃত সংখ্যা আরও তিন থেকে চার গুণ বেশি। কারণ এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে কেবলমাত্র গুম হয়ে যাওয়া পরিবার কর্তৃক প্রদত্ত রিপোর্ট এর ভিত্তিতে, আর অনেক আতঙ্কিত পরিবারই রিপোর্ট করার সাহস পায়নি। বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক মন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমেদকে ২০১৫ সালের ১০ মার্চ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ৬৩দিন গুম করে  চোখ বেধেঁ ভারতে ফেলে আসে। এরপর তাকে সেখানে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শেখ হাসিনার গুমের ইতিহাসে সেটি আরেকটি নজিরবিহীন ঘটনা।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রোম আইন অনুযায়ী-কোন ব্যক্তিকে গুম করা একটি মানবাধিকার বিরোধী অপরাধ। স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো সমাজের মধ্যে ত্রাস ছড়িয়ে দিতে এই ভয়াবহ অপরাধটি করে থাকে। বাংলাদেশেও গুমের ঘটনাগুলোর সবচেয়ে বেশি শিকার হয়েছে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনরত বিএনপিসহ বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মী ও সমর্থকবৃন্দ। এছাড়াও গুমের শিকার হয়েছে দেশের ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী এবং সাধারণ মানুষও। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং প্রশাসনকে কব্জায় নিয়ে দেশে চলছে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ। এধরণের ভয়াবহ পরিস্থিতি উত্তরণে সকল রাজনৈতিক দল, মানবাধিকার সংস্থা, সুশীল সমাজসহ বিবেকবান সকল মানুষকে সোচ্চার হয়ে এই মানবাধিকার লুটের সরকারের পতন ঘটানোর আহবান জানাচ্ছি। গুম, খুন, ক্রসফায়ারের শিকার হওয়াদের স্বজনদের সংগঠন মায়ের ডাকের উদ্যোগে আজ সকালে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে দাঁড়িয়ে স্বজনরা তাদের আকুতি ও মর্মান্তু পরিস্থিতির কথা বলতে চেয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী গুমপন্থী পুলিশ সেখানে দাঁড়াতে দেয়নি। টেনেহিঁচড়ে বের করে দিয়েছে। সরকার তাদের কথা বলতে দিতেও ভয় পাচ্ছে। আজকে গুম খুন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার ব্যক্তিরা তাদের কথা বলতে পারেনা।

 

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, আসুন সাহস, আশা ও দৃঢ় সংকল্পের মনোভাব নিয়ে আমরা চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বিজয়ের দিকে ধাবিত করি। অগণতান্ত্রিক আওয়ামী নাৎসীদের অন্তঃসারশূন্য অপ-প্রচারের মায়াজাল ভেদ করে স্বাধীনতা ও উদার মনোভাবের গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মান না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অক্লান্ত উদ্যম অব্যাহত থাকবে। এই জাতি কোনদিনই স্বেচ্ছাতন্ত্রের কাছে আত্মসমর্পণ করেনি। গণতান্ত্রিক শক্তির কল্পনা ও আশা সর্বদা সজিব, সক্রিয় ও বিকাশশীল তাই বর্তমান আদর্শের সংগ্রামে আমরাই বিজয়ী হবো।