ঢাকা, বৃহস্পতিবার ৯ই মে ২০২৪ , বাংলা - 

ইতালী প্রবাসীকে ফাঁসাতে গিয়ে গৃহবধূ কারাগারে

জেলা সংবাদদাতা।। ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2021-03-05, 12.00 AM
ইতালী প্রবাসীকে ফাঁসাতে গিয়ে গৃহবধূ কারাগারে

নুরুল হক ব্যাপারী নামের এক ইতালী প্রবাসীকে ফাঁসাতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে এক গৃহবধূ। ঘটনাটি ঘটেছে শরীয়তপুরের সদর উপজেলার আঙ্গারিয়া ইউনিয়নের দাঁতপুর উত্তর ভাষানচর গ্রামে।স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ ফেব্রুয়ারী সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই নারী প্রবাসী নুরুল হকের বাড়িতে বিয়ের দাবীতে অনশন করে। এর আগে আরো তিনবার সে এই বাড়িতে আসে বিয়ের দাবীতে।সেই সাথে ওই নারী দাবী করেন, নুরুল হক তার থেকে জমি কেনার জন্য ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ধার নেয় এবং তাকে বিয়ের আশ্বাস দিলে তার পূর্বের স্বামী গ্রীস প্রবাসী সোহাগকে তালাক দেয়। সেই ঘরে তার একটি ছেলে সন্তান আছে।

তিনি আরো বলেন, নড়িয়া পৌরসভার শালারবাজার এলাকায় নুরুল হকের বোন সাবিনার শশুরবাড়ি। একই এলাকায় ভাড়া থাকতেন তিনি। সাবিনা তার স্মার্টফোন দিয়ে প্রবাসী ভাই নুরুল হকের সাথে মাঝে মাঝে কথা বলতেন। সেই সুবাদে নুরুল হকের সাথে তার পরিচয় হয় ফোনে।

নুরুল হকের পরিবারের সদস্যরা জানায়, নুরুল হক
২০১০ সালে কাজের সন্ধানে জর্ডান যান। পরে সেখান থেকে লিবিয়া যান। লিবিয়া থেকে ২০২০ সালের জুলাই মাসে ইতালি পাড়ি জমান। বর্তমানে তিনি ইতালি রয়েছেন।

ইতালী প্রবাসী নুরুল হক মুঠোফোনে জানান, আমার বোন সাবিনার স্মার্টফোন না থাকায় প্রতিবেশী ওই নারীর ফোন থেকে মাঝে মাঝে আমার সাথে কথা বলত। কিন্তু এই মহিলার সাথে আমার কখনো কথা হয়নি।

২০২০ সালের মে মাসে লিবিয়া থাকা কালীন "রাত্রি" নামের একটি ইমু আইডি থেকে একটি মেয়ে আমাকে কল দেয়। পরিচয়ে বলে তার বাসা ঢাকার বনশ্রী বি ব্লকে। সে ঢাকার একটি কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে।

কিছুদিন কথা বলার পর আমি জানতে পারি তার নাম রাত্রি নয়, তার নাম সোনিয়া। তার বিয়ে হয়েছে দশ বছর আগে এবং তার নয় বছরের একটি ছেলে আছে। আমার বোন সাবিনা তার ফোন দিয়েই আমার সাথে কথা বলতো।

তিনি আরো বলেন, আমি যখন এই মহিলার আসল পরিচয় জানতে পারি তখন তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিই। তার সাথে আমার গভীর কোনো সম্পর্ক ছিল না। আমি তাকে বিয়ের আশ্বাস দিইনি এবং তার থেকে কোনো টাকাও ধার নিইনি।

নুরুল হকের পরিবারের সদস্যরা বলেন, একদিন এই মহিলা আমাদের বাড়িতে এসে বলে নুরুল হক তার থেকে টাকা ধার নিয়েছে এবং তাকে নাকি ফোনে বিয়ে করেছে। তখন সে একই এলাকার বিল্লাল সোকদার ও কাশেম ব্যাপারীর কাছে সাহায্য চায়।

তারা আরো বলেন, তার তিনদিন পর ওই নারী আবারো আমাদের বাড়িতে চলে আসে এবং বউ হিসেবে তার অধিকার চায়। তখন স্থানীয় মনির ডাক্তার, ইউপি সদস্য কাদের ফকির এবং স্থানীয় মহসিন মাদবর সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিরা ঘরোয়া বৈঠকে বসেন।

তার দুই দিন পর ২০ ফেব্রুয়ারী আবারো ঘরোয়া বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয় এবং বৈঠকে ওই নারী দাবী করেন, নুরুল হক আমাকে ফোনে বিয়ে করবে বলে জন্ম নিবন্ধন, দুই কপি ছবি ও পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে তার ভাই আমিনুল হক ব্যাপারীর কাছে যেতে বলেন।

ওই নারী আরো বলেন, ‘আমি সদরের আঙ্গারিয়া বাজার গিয়ে আমিনুলের দোকানে এগুলো দিয়ে নুরুল হকের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে একটি ফর্মে স্বাক্ষর
দিই।

এছাড়া জমি কিনবে বলে নুরুল হক আমার কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা চায়। আমি ব্যাংক থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা উঠিয়ে এবং স্বর্ণ বন্ধক দিয়ে দুই দফায় ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দিই। টাকাটা তার ভাই আমিনুলের দোকানে গিয়ে দিয়ে আসি।

বিয়ের কাবিননামা চাইলে এখন নুরুল হকসহ তার
পরিবার বলছে, আমাকে তারা চেনে না। ইতালি থেকে নুরুল হকও সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। আমি বাধ্য হয়েই আমার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ওর বাড়িতে উঠেছি।’

স্থানীয় মনির ডাক্তার জানান, ওই মহিলার দাবীর প্রেক্ষিতে বৈঠকে আমরা তার কাছে বিয়ের ডকুমেন্টস দেখতে চাই এবং কোন ফর্মে সে স্বাক্ষর দিয়েছে তা জানতে চাই। সেই সাথে ব্যাংক থেকে টাকা নেয়া এবং স্বর্ন বন্ধক দেয়ার প্রমাণ দেখতে চাই। কিন্তু সে আমাদেরকে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি।

তিনি আরো বলেন, ২৬ ফেব্রুয়ারী সকালে ওই নারী আবারো নুরুল হকের বাড়িতে এসে অনশনে বসে এবং তার অধিকার না দিলে বিষপান করে আত্মহত্যার হুমকি দিতে থাকে। সন্ধ্যায় খবর পেয়ে পালং মডেল থানার পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

শরীয়তপুর সদরের পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসলাম উদ্দিন বলেন, বিয়ের দাবিতে অনশনে বসে আত্মহত্যা করবে বলে হুমকি দেওয়ায় নুরুল হকের বাড়ি থেকে নারীকে আটক করে
থানায় এনে তার বাবাকে খবর দিয়ে তুলে দিতে চাইলে সে তাকে নিতে অসম্মতি জানায়।

ওসি আরো বলেন, মেয়েটি যেহেতু আত্মহত্যার হুমকি দিচ্ছে তাই তাকে ২৭ ফেব্রুয়ারী আদালতে সোপর্দ করি। এর আগে মেয়েটি থানায় একটি অভিযোগ করে যে বিয়ের প্রলোভনে নুরুল হক তার স্বামীকে তালাক করিয়ে তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে।

কিন্তু তদন্ত করে সাক্ষ্য প্রমাণ না থাকায় বা ঘটনার সত্যতা না পাওয়ায় কোনও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি।