ঢাকা, বৃহস্পতিবার ৯ই মে ২০২৪ , বাংলা - 

কেরাণীগঞ্জের সোর্স হত্যায় গ্রেফতার ৭

মোঃ শাকুর খান শুভ, কেরাণীগঞ্জ প্রতিনিধি

2023-08-01, 12.00 AM
কেরাণীগঞ্জের সোর্স হত্যায় গ্রেফতার ৭

কেরানীগঞ্জে চোঁখ উপড়ে ফেলে হত্যা ঘটনায় ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে। রবিবার দিবাগত রাতে ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের খেজুরবাগ সাতপাখি এলাকায় সাইফুল ইসলাম (২৪) নামে পুলিশের সোর্স এক যুবককে কতিপয় দুবৃর্ত্তরা দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসহভাবে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে এবং চোখ উপড়ে ফেলে নির্মমভাবে হত্যা করে। পরে গতকাল সোমবার নিহত সাইফুলের বোন বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।সে হত্যা ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যে হত্যাকাণ্ডের মূলপরিকল্পনাকারী মোঃ রাজন হোসেন (৩১), পিতাঃ আফসার উদ্দিন ও হত্যাকান্ডে অন্যান্য সহযোগি মোঃ জানে আলম (৩৬), পিতাঃ আফসার উদ্দিন, মোঃ সুমন ওরফে গর্দা সুমন (২৫), পিতাঃ মৃত সেন্টু মিয়া,মোঃ লিটন হোসেন (২৬), পিতাঃ মোঃ আবুল কাশেম, মোঃ দিপু (২৩), পিতাঃ মৃত শামছুল হক, মোঃ সরোয়ার আকন্দ (২৬), পিতাঃ মোঃ ছালাম আকন্দ এবং মোঃ সজীব (২৯), পিতাঃ মোঃ আলী হোসেন । তাদের রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১০।

১ আগস্ট  মঙ্গলবার সকালে র‌্যাব-১০ এর কারওয়ান বাজরের মিডিয়া সেল থেকে এক প্রেস ব্রিফিয়ে এ তথ্য সাংবাদিকদের জানান।

 

গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাব জানতে পারে, গ্রেপ্তারকৃত রাজন গত ২৮ জুন  আইন—শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার হয় এবং সে ধারণা করে যে, তার এই গ্রেপ্তারের পিছনে ভিকটিম সাইফুলের হাত রয়েছে। এছাড়াও গ্রেপ্তারকৃত জানে আলম এবং সুমন ও তার মা ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময় আইন—শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার হওয়ার পিছনেও ভিকটিম সাইফুলের হাত রয়েছে বলে তারা ধারণা করে।

রাজন গত ১৯ জুলাই জামিনে মুক্তি পেয়ে জানে আলম, সুমন ও অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে সাইফুলকে উচিত শিক্ষা দেয়ার পরিকল্পনা করতে থাকে। এছাড়াও তারা জানতে পারে যে, ভিকটিম সাইফুল উন্নত জীবন—যাপনের জন্য চাকুরীর উদ্দেশ্যে অতিসম্প্রতি পাশ্চাত্যের একটি দেশে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিল। এজন্য তাড়াহুড়া করে রাজন এর নেতৃত্বে জানে আলম, সুমন, লিটন, দিপু, সরোয়ার ও সজীবসহ ১০—১২ জনের একটি দল গত ৩০ জুলাই  সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সাইফুলকে উচিত শিক্ষা দেয়ার চূড়ান্ত পরিকল্পনা করে। ভিকটিম সাইফুল দোকান থেকে বাসায় ফেরার পথে গ্রেপ্তারকৃতরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী খেজুরবাগ স্কুল রোডে ওৎ পেতে থাকে। পরবর্তীতে ভিকটিম সাইফুল দোকান বন্ধ করে আনুমানিকরাত সাড়ে ১১ টায় খেজুরবাগ স্কুল রোডে এসে পৌঁছালে সাইফুলের পথরোধ করে ক্রিকেট ব্যাট, ব্যাটন, লোহার রড় ও অন্যান্য দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাথাড়ি আঘাত করতে থাকে।

একপর্যায়ে সাইফুল মাটিতে পড়ে গেলে রাজন পাশের একটি দোকান থেকে কাটা চামচ নিয়ে এসে তার চোখ নৃশংসভাবে উপড়ে ফেলে। সাইফুলের চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে গুরুতর আহত অবস্থায় ফেলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে রাজধানীর একটি সরকারী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সাইফুলকে মৃত ঘোষণা করেন। গ্রেপ্তারকৃতরা হত্যাকান্ড সংঘটনের পর এলাকা থেকে পালিয়ে কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে হত্যাকান্ডের ঘটনাটি গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত হলে তারা আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে রাজধানীর বাহিরে গমনকালে রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে র‌্যাব তাদেও গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা এলাকায় মাদক ব্যবসা ও অর্থের বিনিময়ে সন্ত্রাসীসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড সম্পাদন করত বলেও জানায় র‌্যাব।

রাজন স্থানীয় একটি রিক্সা গ্যারেজ পরিচালনা করত। পাশাপাশি এলাকায় মাদক, ছিনতাই, ডাকাতি, গাড়ি চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত রয়েছে বলে জানা যায়। সাইফুল হত্যা কান্ড তার নেতৃত্বে সংঘটিত হয় এবং হত্যার সময় সে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে সাইফুলকে উপর্যুপরি আঘাত করে এবং কাটা চামচ দিয়ে নৃশংসভাবে সাইফুলের চোখ উপড়ে ফেলে। রাজনের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক, বিস্ফোরক দ্রব্য ও চুরিসহ ৫টির অধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।

জানে আলম রাজমিস্ত্রির কাজ করত। পাশাপাশি সে এলাকায় মাদক, ছিনতাই, চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে সাথে জড়িত রয়েছে বলে জানা যায়। সাইফুল হত্যায় রাজনের অন্যতম সহযোগী ছিল। জানে আলম সাইফুলকে ব্যাটন দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে । তার বিরুদ্ধে অস্ত্র মাদক, বিস্ফোরক দ্রব্য ও চুরিসহ ৪টির অধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।

 

সুমন কাঠ কাটা শ্রমিকের কাজ করত। পাশাপাশি সে এলাকায় মাদক, ছিনতাই, চুরিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত রয়েছে বলে জানা যায়। সাইফুল হত্যাকাণ্ডে রাজনের অন্যতম সহযোগী ছিল। সুমন সাইফুলকে ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে মাথায় গুরুত্বর জখম করে। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক, ডাকাতি ও মারামারিসহ বিভিন্ন অপরাধে ৪টির অধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।

লিটন, দিপু, সরোয়ার ও সজীব ভিকটিম সাইফুল হত্যায় রাজনের সহযোগী ছিল। লিটন মুদ্রাক্ষরিক (টাইপ করে), দিপু ও সজীব জাহাজ ভাঙ্গার শ্রমিক এবং সরোয়ার রং মিন্ত্রির কাজ করত। এছাড়াও তারা রাজনের নেতৃত্ব এলাকায় মাদক, ছিনতাই, চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত করত বলে জানা যায়। হত্যাকাণ্ডের সময় লিটন, দিপু, সরোয়ার ও সজীব লাঠি ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র দিয়ে সাইফুলকে এলোপাথাড়িভাবে আঘাত করে গুরুতর জখম করে। তাদের বিরুদ্ধে মাদক ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধে একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।