ঢাকা, শনিবার ১১ই মে ২০২৪ , বাংলা - 

ইলিশের আকাল,দুর্দিনে মালিক-শ্রমিক

স্টাফ রিপোর্টার ।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2023-07-10, 12.00 AM
ইলিশের আকাল,দুর্দিনে মালিক-শ্রমিক

ভরা মৌসুমেও ইলিশের আকাল। নদী ও সাগরে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। এতে দুর্দিন চলছে বরিশালের বরফকল মালিকদের। বন্ধ রয়েছে বরফ উৎপাদন। এ অবস্থায় কারখানার খরচ, বিদ্যুৎ বিল ও শ্রমিকদের মজুরি দিতে হিমশিম খাচ্ছেন মালিকরা। মাসের পর মাস এভাবে বরফকল টিকিয়ে রাখতে ধারদেনা করে চলতে হচ্ছে তাদের। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক বরফকল। শনিবার (৮ জুলাই) বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর তীর সংলগ্ন চাঁদমারি এলাকায় গড়ে ওঠা কয়েকটি বরফকল কারখানায় গিয়ে দেখা যায় এমন দৃশ্য। চাহিদা না থাকায় কয়েকটি কারখানায় বরফ উৎপাদন বন্ধ।বরফকলে কর্মরত কয়েকজন শ্রমিক জানান, ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞার পর থেকেই তাদের কোনো কাজ নেই। বিগত দিনে এসময় বরফ উৎপাদন করে শেষ করতে পারতেন না।মো. সবুজ নামের একজন শ্রমিক বলেন, ‘এমনও দিন গেছে ভাত খাওয়ার সময় পর্যন্ত পেতাম না। রাতে অল্প সময় ঘুমিয়ে আবার কাজ শুরু করে দিতাম। এখন কোনো কাজ নেই বললেই চলে। যে কাজ হয় তাতে কোনোরকম নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।’আরেক শ্রমিক রাকিব বলেন, ‘ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা শুরু হলে আমাদের বরফকলেও নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়। দুই মাস হয়েছে নদী ও সাগরে নিষেধাজ্ঞা চলে, তাই বরফ উৎপাদনও বন্ধ। এই দুই মাসে আমাদের কোনো কাজ নেই। ধারদেনা করে কোনোরকম সংসার চলছে।’চাঁদমারি এলাকার সেভেন স্টার আইস কারখানার ম্যানেজার নাসির হোসেন  বলেন, ‘ইলিশ আছে তো বরফ উৎপাদন আছে, ইলিশ নেই তো বরফ উৎপাদন নেই।’তিনি বলেন, ‘বিগত দিনে এমন সময় আড়তগুলোতেও একশ মণের ওপর ইলিশ আসতো। এখন ইলিশের ভরা মৌসুমেও সবমিলিয়ে ১০ মণ মাছও আসছে না। ফলে আমাদের বরফ উৎপাদন বন্ধ।’নাসির হোসেন আরও বলেন, ‘মালিক পক্ষ কারখানার ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল ও শ্রমিকদের মজুরি দিতে হিমশিম খাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরেই এ অবস্থা চলছে। অনেককে দেখেছি ধার করেও কারখানার খরচ বহন করছেন।’নগরীর পোর্ট রোডের চিশতি এন্টারপ্রাইজের মালিক শহিদুল ইসলাম। তিনি  বলেন, ‘বিগত মৌসুমে এমন দিনে বরফ উৎপাদন করে শেষ করতে পারতাম না। এবার মাছ না থাকায় বরফ উৎপাদনও বন্ধ। যে পরিমাণ মাছ আসছে তাতে বরফকল চালিয়ে পোষায় না।’বরিশাল বরফকল মালিক সমিতির নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম কবির জানান, একসময় বরিশালে ৪০টি বরফকল ছিল। সেখান থেকে এখন টিকে আছে মাত্র আটটি। এ আটটি বরফকলের মধ্যে বর্তমানে চালু একটি।

 

তিনি বলেন, ‘সিজনে একেকটি বরফকলে আগে দুই থেকে আড়াই হাজার ক্যান বরফ উৎপাদন হতো। সেখানে শুক্রবার (৭ জুলাই) ২৫০ ক্যান ও শনিবার (৮ জুলাই) ১২০ ক্যান বরফ উৎপাদন হয়েছে।’গোলাম কবির বলেন, আষাঢ় মাস ইলিশের ভরা মৌসুম অথচ মৌসুম শুরুর এক সপ্তাহ পরও নদ-নদীতে ইলিশের দেখা নেই। সরকারের নিষেধাজ্ঞা ঠিক আছে, কিন্তু নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কিছু অসাধু জেলে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে জাটকা ধরে বাজারে বিক্রি করেন। ভরা মৌসুমেও ইলিশ না থাকার জন্য প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা দায়ী। ইলিশের সিজনে আড়তে মাছ না থাকায় আমাদের বরফ উৎপাদনও বন্ধ।’

 

ডুবোচর ও জাটকা সংরক্ষণ করতে না পারায় বর্ষার ভরা মৌসুমেও নদ-নদীতে মিলছে না ইলিশ। জেলেরা নিয়মিত নদীতে গেলেও ফিরছেন খালি হাতে। এতে বরিশালের ইলিশের আড়তে নেই চিরচেনা সেই হাঁকডাক।বরিশাল নগরীর পোর্টরোড ঘুরে দেখা যায়, ইলিশের পাইকারি আড়তগুলো ইলিশশূন্য। যতটুকু ইলিশ উঠছে, তার দাম অত্যধিক। এক কেজি ওজনের একটি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রায় দুই হাজার ৩৮২ টাকায়। ৬০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৮৫০ টাকা। ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজিও ১ হাজার ৫০০ টাকার ওপরে।জেলে, আড়তদার ও মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ১ জুলাই থেকে ইলিশ ধরার মৌসুম শুরু হয়েছে। বর্ষার চিরচেনা এই পরিবেশে নদ-নদীতে বেশি বেশি ইলিশ ধরা পড়ার উপযোগী সময়। সে অনুযায়ী এখন আড়তগুলো ইলিশে ভরপুর থাকার কথা। অথচ আড়তে কর্মরত শ্রমিকদের অলস সময় পার করতে দেখা গেছে।

 

হিজলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা এম এম পারভেজ জানান, মেঘনায় অনেক জায়গায় চর পড়ে পানির গভীরতা কমে গেছে। বিশেষ করে সাগর মোহনায় নদীর মুখ চর পড়ে বন্ধ হয়ে গেছে। নদীর গতিপথও পরিবর্তন হয়েছে। যে কারণে ভরা মৌসুমেও নদীতে ইলিশ আসছে না। এজন্য নদীদূষণও দায়ী।

মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালক আনিসুর রহমান তালুকদার বলেন, নদীতে ডুবোচর জাগার কারণে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে। ইলিশ গভীর পানির মাছ। ফলে হয়তো স্থান পরিবর্তন করছে ইলিশ। তবে আমাদের নদ-নদীতে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ রয়েছে। বিগত দিনের চেয়ে বেশি ইলিশ পাওয়া যাবে।