ঢাকা, শনিবার ১১ই মে ২০২৪ , বাংলা - 

বঙ্গবাজার মার্কেটের অগ্নিকান্ডের দায় সরকারের

স্টাফ রিপোর্টার ।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2023-04-06, 12.00 AM
বঙ্গবাজার মার্কেটের অগ্নিকান্ডের দায় সরকারের

‘বঙ্গবাজার মার্কেটের অগ্নিকান্ডের দায় সরকার ও তার বিভিন্ন সংস্থার’ বলে অভিযোগ করেছেন  মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।তিনি বলেন, ‘‘ আমরা পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, বেশি কিছু দিন আগে সেখানে(বঙ্গবাজার মার্কেটে) সিটি করপোরেশন এটাকে ঠিক নিরাপদ নয়ৃ এই ধরনের ঘোষণা দিয়ে সেখানে খালি করার জন্য তাদেরকে বলেছে যে ঠিক করা উচিত। কিন্তু নো-বডি টুকেন ইন্টারেস্ট.. কারো যেন কোনো মাথা ব্যথা নেই।”

‘‘ একটা কাঠের স্ট্রাকচার বলা যায়-সেটা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলে রেখে সরকার বলুন, সরকারের যে সমস্ত সংস্থা আছে যারা এসবের দায়িত্বে রয়েছে তারা বা সিটি করপোরেশন কেউই কিন্তু এই দায়িত্বটা পালন করেনি। আমরা মনে করি, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর উদাসীনতা, অযোগ্যতা, দুর্নীতি ও নজরদাবির অভাবের কারণ এই ধরনের ভয়্বাহ পরিণতির স্বীকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।”

সিদ্দিকবাজারে অগ্নিকান্ডে হতাহতের ঘটনা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ সিদ্দিকবাজারে কিছু দিন আগে যে ঘটনা ঘটেছে তাতে তাতে ২১ জনের প্রাণ গেছে। এখানে(বঙ্গবাজার মার্কেট) আল্লাহর রহমতে কারো প্রাণ যায়নি। কিন্তু যে পরিমান ক্ষতি হয়েছে সেটা ভয়ংকর এই নিম্ন আয়ের মানুষগুলো অথবা সাধারণ ব্যবসায়ীদের প্রচন্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে, অনেকে নিঃস্ব হয়ে গেছেন এবং সেটা ঈদের আগে যখন তাদের সর্বস্ব পূঁজি বিনিয়োগ করেছে।”

‘‘ গতকাল বিএনপির স্থায়ী কমিটি সভায় এই বিষয়গুলো আলোচনা হয়েছে। সভায় বঙ্গবাজারসহ সকল বাজারে অগ্নি নির্বাপন ও সকল নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করণের দাবি জানিয়েছে।”

 

‘অগ্নি নির্বাপণের আধুনিকায় নেই’

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘‘ কী দুর্ভাগ্য এদেশের যে এতো উন্নয়ন, চতুর্দিকে উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। অথচ অগ্নি নির্বাপণের জন্য যে আ্ধুনিক ব্যবস্থা করা দরকার সেই ব্যবস্থাগুলো এখানে নাই। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে যে কাজগুলো ফায়ার েিব্গ্রড করতে পারে সেই ইকুইপমেন্টসই তাদের নাই। এটা ফায়ার বিগ্রেডের দোষ না। এটা হচ্ছে যারা সরকার চালাচ্ছে যারা এরজন্য দায়ী আছে তারা জনসাধারণের সেবার জন্য যে কাজগুলো দরকার সেটাকে তারা গুরুত্ব দেয় না।”

‘‘ তাদের গুরুত্ব হচ্ছে কোন খানে তারা কমিশন বেশি, কোন খানে তাদের টাকা উপার্জন বেশি হবে সেগুলোতে তাদের প্রায়োরিটি সেই জায়গায়। আমরা মনে করি, এটার জন্য দায়ী সম্পূর্ণ সরকারের। এ্ই দায় নিয়ে তাদের পদত্যাগ করা উচিত।”

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে বুধবার রাতে অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত জানাতে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।

‘র‌্যাবের অপকর্মের ডুকেমেন্টারি প্রসঙ্গে’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ সম্প্রতি জার্মান মিডিয়া ‘ডয়েচে ভ্যাল’  সোশ্যাল মিডিয়ায় র‌্যাবের ওপর একটা ডকুমেন্টারি বেরিয়েছে। এটা খুব সেনসেটিভ হওয়ার কারণে আমাদের দেশের বেশিরভাগ পত্রিকায় কোনো নিউজ করেনি, কেউ বলেনওনি। সেনসেটিভ হলেও এটা বাস্তবতা। ‘ডয়েচ ভেল’ করেছে।এই ডকুমেন্টারি বিরুদ্ধে নেগেটিভ কোনো কিছু, যে অস্বীকার করা.. সেটা কিন্তু আসেনি।”

‘‘ এই ডকুমেন্টারি প্রমাণ করেছে যে, অনির্বাচিত সরকার আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবৈধভাবে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এই কাজগুলো করছে। আপনারা দেথেঝেন যে. কি ভয়ংকর। যদি এমন হয় যে, সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে, শীর্ষ পর্যায় থেকে যদি নির্দেশ দিয়ে এসমস্ত কাজ করা হয় তাহলে এসব সংস্থাগুলো কি ভয়ংকরভাবে জনগনের মানবাধিকার কিভাবে তারা লঙ্ঘন করতে পারে তার প্রমাণ।”

সরকার রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে ‘মানবাধিকার বিরোধী, সংবিধান বিরোধী’ এসব কাজ করছে অভিযোগ করে অবিলম্বে তা বন্ধের দাবিও জানান তিনি।

‘সেই যুগ্ম সচিব বাইরেই রয়ে গেলো’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ যুগ্ম সচিব আজিজুল হক কিন্তু বাইরে থেকে যাচ্ছেন। অথচ তার নির্দেশে র‌্যাব গেছে সুলতানা জেসমিনের বাসায়, উনি(আজিজুল হক) বাসা চিনিয়ে দিয়েছেন। কোনো মামলা ছাড়া এতো বড় বেআইনি কাজ সরকারের একজন যুগ্ম সচিব কিভাবে করতে পারেন-এটা আমাদের প্রশ্ন।”

‘‘আমরা সুলতানা জেসমিনকে বেআইনিভাবে তুলে নিয়ে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যার সাথে দায়ী র‌্যাব কর্মকর্তাবৃন্দ, সরকারের যুগ্ম সচিব আজিজুল হকের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানাচ্ছি।”

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সভায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, যায় যায় দিন সম্পাদক শফিক রেহমান, দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার সম্পাদক আবু আসাদেরসহ অন্যান্য সাংবাদিক ও নাগরিকদের ওপরে মামলা দায়ের করে নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহবানের পাশাপাশি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি বাতিলের দাবি জানান মহাসচিব।

‘নরসিংদীর পুলিশের ভুমিকার নিন্দা’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমাদের দলের যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন তিনি নরসিংদীর আহ্বায়কের দায়িত্বে রয়েছেন তার বাসার সঙ্গে দলীয় কার্যালয়ে। সেখানে গতকাল(বুধবার) জেলা কমিটির সভা ডাকা হয়ৃ। জেলা সদস্যরা উপস্থিত হয়ে দেখতে পান যে, কার্যালয়ে তালা লাগানো চারদিক থেকে পুলিশ ঘেরাও করে রেখেছে। সদস্যরা ব্যারিকেড ভেঙে কার্যালয়ের যান এবং মিটিং শুরু করেন। মিটিংয়ের শেষের দিকে কিছু দুস্কৃতিকারী-দুর্বত্ত পুলিশের ছত্রছায়ায়ৃ দুইটি পুলিশ তারা মাঝখান দিয়ে এসে আক্রমন করে এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে জানালা-দরজা ভেঙে পড়ে যায়।ককটেল মিটিংয়ের মধ্যেও এসে পড়ে স্বাভাবিকভাবে মিটিংও পন্ড হয়ে যায়।”

‘‘ আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, একটি রাজনৈতিক দল তার জেলা কার্যালয়ে সভা করবে-এটা তার সম্পূর্ণ  সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক অধিকার। সরকার বার বার চিতকার করে বলছেন, আমরা গণতন্ত্রের জন্য কোনো বাধা দিচ্ছি না কোথাও। নরসিংদীর ঘটনাই প্রমাণ করে তারা বাঁধা দিচ্ছে। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, পুলিশের সামনে কি করে দুস্কৃতিকারী কার্যালয়ে ঢুকলো এবং সভা পন্ড করে দিলো।”

২৬ ফেব্রুয়ারিতে এই কার্যালয়ে পুলিশের সামনেই দুস্কৃতিকারীরা হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ, খায়রুল কবির খোকনকে লক্ষ্য করে দৃস্কৃতিকারীদের গুলিবর্ষন, ২ এপ্রিল নরসিংদী জেলা আইনজীবী সমিতির অফিসে থেকে ইবনে আদেল শশীকে প্রকাশ্যে দুস্কৃতিকারীরা তুলে নিয়ে হত্যার অপচেষ্টার কয়েকটি  ঘটনাও তুলে ধরেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘‘ আমরা লক্ষ্য করেছি যে, নরসিংদীর পুলিশ প্রশাসন তারা প্রত্যক্ষভাবে বিএনপির বিরুদ্ধে যেন যুদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে।”

‘‘আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই এটা সম্পূর্ণভাবে সংবিধান বিরোধী, আইন বিরোধী। আমরা বাধ্য হবো এসব ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করতে।”

রাজধানীতের বুধবার রাতে নিকুঞ্জের ৫ নং সড়কে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র দল সভাপতি আবু হোরায়রা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিবুল ইসলাম তালুকদার বিন্দু, সহ দফতর সম্পাদক আনোয়ারের ওপর হামলার ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনার নিন্দা ও দোষীদের গ্রেফতার দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদ টিটো উপস্থিত ছিলেন।