ঢাকা, শুক্রবার ১০ই মে ২০২৪ , বাংলা - 

মানুষের রক্ত শোষন করছে সরকার

স্টাফ রিপোর্টার ।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2023-03-27, 12.00 AM
 মানুষের রক্ত শোষন করছে সরকার

বর্তমান সরকার ‘পাকিস্তান বাহিনীর প্রেত্মাতা’  বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ।সোমবার দুপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের এক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।তিনি বলেন, ‘‘ আপনারা কী যুদ্ধ করেছিলেন আজকের এই বাংলাদেশের জন্যে?আজকের বাংলাদেশ এখন এটা একাত্তর সালের পাকিস্তান বাহিনীর এবং পাকিস্তার শাসকের প্রেত্মাতার বাংলাদেশ।”‘আজকে একইভাবে যেভাবে পাকিস্তানিরা শাসন করেছে, শোষণ করেছে, মানুষের রক্ত চুষে নিয়েছে। আজকে একইভাবে এই আওয়ামী লীগের সরকার যারা জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে তারা একইভাবে বাংলাদেশের মানুষকে শোষণ করছে, তাদের রক্ত শোষন করছে এবং মানুষকে তারা ভয়ংকরভাবে নির্যাতন করছে।”

 

 

 

ফখরুল বলেন, ‘‘ এই বাংলাদেশ আমরা চাইনি। আমরা চেয়েছিলাম কোন বাংলাদেশ? যে বাংলাদেশের স্বপ্ন আমাদেরকে দেখিয়েছিলেন আমাদের সেই পূর্বপুরুষরা, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়্উার রহমান- যে একটা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ যেখানে সমস্ত মানুষ সাম্যের মধ্যে বাস করবে, ন্যায় বিচারের মধ্যে বাস করবে, মানবিক মর্যাদা নিয়ে বাস করবে, কল্যাণের মধ্যে বাস করবে-সেই বাংলাদেশ আমরা চেয়েছিলাম।”

 

 

 

‘‘ কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের- আমরা সেই ৫২ বছর পরে আজকে এখানে দাঁড়িয়ে আপনাদেরকে.. যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন তাদের বলতে হচ্ছে যে, আমরা সেই বাংলাদেশ পাইনি। এর চেয়ে হতবাগা কে হতে পারে আমাদের মধ্যে? তার কারণটি হচ্ছে যে, দলটি দাবি করে যে, তারা স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলো.. তারা ক্ষমতায় আসার পরে তাদের আসল চেহারা সেই ১৯৭২ সালের মতো। এখানে অনেকে আছে তারা জানেন, ১৯৭২ সালে তারা(আওয়ামী লীগ) কি করেছিলো? একইভাবে লুটপাট করেছে, একইভাবে তারা জনগনের সম্পদকে লুট করেছে, একইভাবে তারা দুর্নীতি করেছেৃ.।”

 

 

 

মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘‘আজকে আমরা যারা এখানে একসময়ে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম, যারা জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছেন আজকে আপনাদের দায়িত্ব হচ্ছে এই যে নতুন প্রজন্ম, তাদের কাছে সেই বানী পোঁছিয়ে দেয়া যে, আমাদের যখন যৌবন ছিলো আমরা লড়াই করেছি, যুদ্ধ করেছে, একটা স্বাধীন ভূখন্ড নিয়ে এসেছি।”

 

 

 

‘‘ আর এখন তোমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সেই স্বাধীনতাকে রক্ষা করবার জন্য, গণতন্ত্রকে রক্ষা করবার জন্য, অধিকারকে রক্ষা করবার জন্য ৃ তুমি যে নাগরিক স্বাধীন দেশের, ভোট দেয়ার অধিকার আছে, বেঁচে থাকার অধিকার আছে সেটাকে রক্ষা করবার জন্য তোমাকে আরেকটা মুক্তিযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আজকে দেশকে রক্ষা করবার জন্য, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সরকারের হটাতে হবে।”

 

 

 

রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ‍উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উদ্যোগে এই মুক্তিযোদ্ধা গণসমাবেশ হয়।এতে সারা দেশের রনাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধারা অংশ নেন। তাদের হাতে ছিলো বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।

 

 

 

গণসমাবেশে মঞ্চে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জন্যে একটি চেয়ার সংরক্ষিত রাখা হয়।

 

 

 

অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের সাতজন (তারেক রহমান, শ্যামা ওবায়েদ, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, ইশরাক হোসেন, নিপুণ রায় চৌধুরী, সোনিয়া সান্তা, জামাল হোসেন টু্য়লে) হাতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা তুলে দেয়া হয়।

 

 

 

জিয়াউর রহমানের ছেলে তারেক রহমানকে দেয়া বাংলাদেশের পতাকা গ্রহন করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

 

 

 

‘এই বাংলাদেশে মানুষের নিরাপত্তা নেই’

 

 

 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আজকের পত্রিকায় একটা খবর আছে – নওগাঁর একজন মহিলা সরকারি অফিসে সহকারি হিসেবে চাকুরি করেন তাকে র‌্যাব তুলে নিয়ে গেছে.. তারপরের দিন দেখা গেছে যে সে হাসপাতালে একেবারে অজ্ঞান এবং শেষ পর্যন্ত সে মারা গেছে।ডাক্তাররা বলছেন যে, তার মাথার ভেতরে অনেক রক্তপাত হয়েছে এবং তার কপালে ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।”

 

 

 

‘‘ এই বাংলাদেশ যেখানে একজন মানুষের জীবনের নিরাপত্তা পর্যন্ত নাই সেই বাংলাদেশ আজকে তৈরি হয়েছে। যে র‌্যাবকে সেনসন দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র- যেটা আমাদের জন্য জাতি হিসেবে অত্যন্ত লজ্জ্বার সেই র‌্যাব আবার তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে আজকে নির্যাতন করে এই নারীকে হত্যা করা হয়েছে। সবচেয়ে দূঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা দেয়া হয়েছে।”

 

তিনি বলেন, ‘‘ আরো দুই-একটা ঘটনা হয়েছে এর মধ্যে। যদিও কিছুদিন আগে বলা হয়েছে যে, সেনশনের পরে নাটকীয়ভাবে এক্সট্টা জুডিশিয়াল কিলিং বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু আবারো ঘটছে- কেনো? এই অবৈধ সরকার তারা ওই সমস্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করে নাই যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, তারা এক্সট্টা জুডিশিয়াল কিলিং করেছে, গুম করেছে, খুন করেছে। এই সরকার সেই সমস্তের কোনো বিচার করে নাই।”

 

 

 

‘‘ বরং তাদেরকে আরো পুরস্কৃত করা হচ্ছে। তারা আরো বড় বড় পদ পাচ্ছেন। তাদেরকে বলা হচ্ছে যে, পরবর্তিতে তাদেরকে এমপি নমিনেশন দেয়া হচ্ছে, কাউকে কাউকে নাকী হোম মিনিস্টার করা হবে.. ইত্যাদি খবর পত্র-পত্রিকায় দেখতে পাই। এদেশে কোনো আইনের শাসন নেই, কোনো গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান নেই, আমাদের অধিকারগুলো কেড়ে নেয়া হয়েছে। আমাদেরকে সত্যিকার অর্থে মধ্য যুগীয় একটা বর্বরদেশে পরিণত করা হয়েছে।”

 

 

 

‘ভিন্নমতের মুক্তিযোদ্ধারা বঞ্চিত’

 

 

 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ বিএনপির সাথে সম্পৃক্ত অর্থাত ভিন্নমত পোষনকারী যারা মুক্তিযোদ্ধা তারা কি ভাতা পাচ্ছেন এখন? না। মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম উঠেছে? উঠে নাই।”

 

 

 

‘‘ এই সরকার তাদের সঙ্গে যারা একমত হবে না, তাদের সকলকে তারা সব রকমের অত্যাচার-নির্যাতন করে তাদেরকে দমন করে রাখতে চায়।”

 

 

 

মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের সঞ্চালনায় মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, শাহজাহান ওমর, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী, ফজলুর রহমান, আমান ‍উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, জয়নুল আবদিন, সিরাজুল হক, শাহ আবু জাফর, মুক্তিযোদ্ধা দলের আবদুল হালিম, কামাল উদ্দিন, নুরুল করিম, এবাদুল হক, আবদুল খালেক মন্ডল, আবদুল মান্নান, মোকসেদ আলী মোঙ্গলিয়া, আব্বাস উদ্দিন, জহিরুল আলম তালুকদার রুকু, ওয়াহিদুর রহমান প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।

 

 

 

দেশের অর্থনীতির ভঙ্গুর অবস্থা এবং দ্রব্যমূল্যের ‍ঊধর্বগতির পরিস্থিতি তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব এজন্য সরকারের চরম ব্যর্থতা, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতিকে দায়ী করেন।

 

 

 

মুক্তিযোদ্ধার প্রজন্মের নেতা শ্যামা ওবায়েদ, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, ইশরাক হোসেন, নিপুণ রায় চৌধুরী, যুব দলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু ও ছাত্র দলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণও বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠান শুরুর আগে ইন্সটিটিউশনের বাইরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর শাহজাহান ওমর বীরোত্তম এবং গণসমাবেশের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন আরেক ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম।