ঢাকা, শুক্রবার ২৬ই এপ্রিল ২০২৪ , বাংলা - 

মন্ত্রী-এমপি-বিত্তশালীদের জন্য মডেল টাউন

স্টাফ রিপোর্টার।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2021-11-05, 12.00 AM
মন্ত্রী-এমপি-বিত্তশালীদের জন্য মডেল টাউন

সাধারণ মানুষের কয়েক হাজার ঘরবাড়ি-জলাশয়-পার্ক ভেঙে মন্ত্রী, এমপি ও বিত্তশালীদের জন্য মডেল টাউন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ - রাজউক। এ জন্য বড় দুটি প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি এসেছে। এর একটি মূলত মন্ত্রী-এমপিদের জন্য, অন্যটি বিত্তশালীদের জন্য। তবে রাজউক বলছে, সাধারণ মানুষও সেখানে প্লটের আবেদন করতে পারবেন। তবে নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, মডেল টাউন যদি করতেই হয় তাহলে ঢাকার বাইরে করা উচিত।

মন্ত্রী-এমপিদের জন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে সাভার ও কেরানীগঞ্জের ১৬টি মৌজায়। কয়েক হাজার পরিবার এ এলাকায় বহুকাল ধরে বসবাস করছে।আর বিত্তশালীদের জন্য প্রকল্পটি হবে আমিনবাজার থেকে গাজীপুরের কাশিমপুর পর্যন্ত তুরাগ নদের দুই পাড় ঘেঁষে। এসব এলাকায় বেশকিছু ঘরবাড়ি, কারখানা, পার্ক, রেস্টুরেন্ট, পিকনিক স্পট, আবাসন প্রকল্পসহ বিভিন্ন ধরনের অবাঠামোও রয়েছে। দুটি প্রকল্পেরই সবকিছু চূড়ান্ত করা হয়েছে।

প্রকল্প দুটি প্রসঙ্গে রাজউকের চেয়ারম্যান এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী গণমাধ্যমকে বলেছেন, দুই বছর ধরে দেশে করোনা মহামারি চলছে। এ জন্য কাজ এগোয়নি। এখন দ্রুতই কাজ শুরু হবে। রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছেন, আশুলিয়ার প্রকল্পটিতে বিদেশি বিনিয়োগকারী পাওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। আর কেরানীগঞ্জ মডেল টাউন বাস্তবায়ন করতে হবে রাজউকের নিজস্ব অর্থায়নে।

রাজউক সূত্র জানায়, যেসব এমপি-মন্ত্রী রাজধানীতে প্লট পাননি, বিভিন্ন সময়ে তারা প্লটের জন্য সংসদে সরব হয়েছেন। তাদের চাপে ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে কেরানীগঞ্জ মডেল টাউন নামে একটি প্রকল্পপত্র তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠায় রাজউক। ওই বছরই পূর্ত মন্ত্রণালয় প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়।

রাজউকের প্রকল্পপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, সাভার-কেরানীগঞ্জের ১৬টি মৌজায় দুই হাজার ২৮৭ একর জমিতে আট হাজার প্লট তৈরি করা যাবে। মৌজাগুলো হলো- আহাদিপুর, বড়েকান্দি, বাড়িলগাঁও, বেলতা, দক্ষিণ বাহেরচর, দেওলী কাশারিয়া, নজিপুর, উত্তর বাহেরচর, তারানগর, ছাগলকান্দি, মুন্সিনোদ্দা, চুনারচর, তুরাগ, পাঁচুলী ও ভাকুর্তা। প্রকল্প এলাকার বেশিরভাগ জমিই তারানগর ইউনিয়নে পড়েছে। তারানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ফারুক গণমাধ্যমকে বলেন, রাজউক ২২-২৩শ একর এলাকায় এটা বাস্তবায়ন করতে চায়। কিন্তু আমরা বলেছি, ৯০০ একরের মধ্যে করতে। এগুলো খালি আছে। বাকি এলাকায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার ঘরবাড়ি রয়েছে। ঘরবাড়ি ভেঙে করলে এলাকাবাসীর আপত্তি আছে। এ জন্য এলাকাবাসী বছর তিনেক আগে আন্দোলনও করেছিল।রাজউক বলছে, এলাকাবাসী যাতে অসন্তুষ্ট না হয়, সে জন্য তাদের বাজারমূল্যের তিনগুণ ক্ষতিপূরণ ও প্লট দেওয়া হবে।

অন্যদিকে আশুলিয়া মডেল টাউন প্রকল্পে বলা হয়েছে, আমিনবাজার ল্যান্ডফিল থেকে উত্তর দিকে আশুলিয়া পর্যন্ত তুরাগ নদের দুই পাশ দিয়ে গাজীপুরের কাশিমপুর পর্যন্ত এলাকায় হবে এই আবাসন প্রকল্প। যেসব স্থান ভরাট হয়ে গেছে সেখানে প্লট বানিয়ে বরাদ্দ দেওয়া হবে। এরই মধ্যে ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংকে (আইডব্লিউএম) দিয়ে ওই এলাকার জরিপও করেছে রাজউক। তাতে দেখা গেছে, সেখানে ৭১ শতাংশ জলাশয় রয়েছে। বাকি ২৯ শতাংশে প্লট, খেলার মাঠ, বিনোদন কেন্দ্র, মার্কেট, হোটেল প্রভৃতি তৈরি করা যাবে।

নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান গণমাধ্যমকে বলেছেন, কেরানীগঞ্জ ও আশুলিয়ায় দুটি স্মার্ট সিটি করতে চায় রাজউক। এ নিয়ে নগর পরিকল্পনাবিদদের সঙ্গে রাজউক একটি বৈঠকও করেছিল। তখন পরিকল্পনাবিদরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, যেখানে সরকারের প্রধানমন্ত্রী-পূর্তমন্ত্রী বলেছিলেন আর কোনো প্লট বরাদ্দ দেওয়া হবে না, সেখানে কেন আবার এই উদ্যোগ?

তিনি বলেন, আমরা ওই বৈঠকে বলেছি, স্মার্ট সিটি যদি করতেই হয়, তাহলে ঢাকার বাইরে করা উচিত হবে। কারণ সবকিছু ঢাকায় কেন্দ্রীভূত করা ঠিক হবে না। এছাড়া জলাশয় বা তুরাগ নদ রক্ষা করতে না পেরে যদি সেখানে আবাসন প্রকল্প নেয় রাজউক, তা হবে দুঃখজনক।