ঢাকা, শনিবার ২৩ই নভেম্বর ২০২৪ , বাংলা - 

নতুন যাত্রা শুরু হবে বুধবার

স্টাফ রিপোর্টার ।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2023-07-10, 12.00 AM
নতুন যাত্রা শুরু হবে বুধবার

বুধবার ঢাকার সমাবেশ থেকে সরকার পতনে ‘রাজপথে নামার’ নতুন ঘোষণা আসবে বলে জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।রোববার বিকালে আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে তারুণ্যের সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব একথা জানান।তিনি বলেন, ‘‘ আজকে দেশকে মুক্ত করতে হবে, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে। আমাদের যে মাতা যে নেত্রী দেশনেত্রী বছরের পর বছর নির্যাতন ভোগ করছেন এখনো, এই বৃদ্ধ বয়সে এসে কারাগারে আটক রয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া তাকে মুক্ত করতে হবে, আমাদের নেতা তারেক রহমান যিনি ১০০০ মাইল দূরে মিথ্যা মামলায় নির্বাসিত অবস্থায় আছেন তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে আর আমাদের মতো ৪০ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা রয়েছে সেই মামলাগুলোকে প্রত্যাহার করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে এই সরকারকে বিদায় দেয়া ছাড়া কোনো উপায় আছে।”

 

‘‘ এই ব্যাপারে কি আপনারা সবাই একমত, সবাই নামবেন। নেমেছেন নাকি? তাহলে আগামী ১২ তারিখ ঢাকায় একটা সমাবেশ হবে। সেই সমাবেশে নতুন ঘোষণা আসবে, সেই ঘোষণার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের নতুন যাত্রা শুরু হবে।”

 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ সেই যাত্রায় তরুণদের জেগে উঠতে হবে, সমগ্র মানুষকে জাগিয়ে তুলতে হবে। গণতন্ত্রকে উদ্ধার করবার জন্য, দেশনেত্রীকে মুক্ত করবার জন্য তারেক রহমান সাহেবকে ফিরিয়ে আনবার জন্য, আমাদের মানুষকে মুক্ত করবার জন্য, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করবার জন্য আমাদেরকে এই সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।”

 

‘‘ এই সংগ্রামে রাজপথে মানুষ আর মানুষ, তরুণ আর তরুণ, যুবক আর যুবকের সমাহার দিয়ে এই ভয়াবহ দানবীয় সরকার যারা আমার বুকের ওপর চেপে বসে আছে তাদেরকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থেই একটা জনগনের সরকার, জনগনের পার্লামেন্ট, জনগনের রাষ্ট্র আমাদেরকে নির্মাণ করতে হবে।”

 

জাতীয়তাবাদী যুব দল, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল ও জাতীয়তাবাদী ছাত্র দলের যৌথ উদ্যোগে সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে তারণ্যের এই সমাবেশ হয়। সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জের থেকে হাজার হাজার নেতা-কর্মী মিছিল নিয়ে এই সমাবেশে যোগ দেয়। নেতা-কর্মীদের মাথায় লাল-সবুজ-হলুদ রঙের টুপি এবং গায়ে ছিলো রঙ্গিন টি-শার্ট।

 

গত ১০ জুন চট্টগ্রামের মধ্য দিয়ে তারুণ্যের সমাবেশের কর্মসূচি শুরু করে ইতিমধ্যে বগুড়া ও বরিশালের সমাবেশে শেষ করেছে। সিলেটের সমাবেশটি চতুর্থ। এরপর খুলনা ও ঢাকায় হবে।

 

‘ওরা নির্বাচনকে অস্ত্র বানিয়েছে’

 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘দুইটা নির্বাচন করেছে এর আগে। আর নির্বাচনটা কি?নির্বাচনটা হলো একটা অস্ত্র। বেআইনিভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার নির্বাচন ব্যবস্থাকে তাদের মতো করে ব্যবহার করার জন্য তারা নির্বাচনটা ব্যবহার করেন। আর বলবেন, নির্বাচন তো হবে। আওয়ামী লীগের আমলে নাকী সবচেয়ে ভালো নির্বাচন হয়, আওয়ামী লীগ নাকী সবচেয়ে ভালো নির্বাচন করতে পারেৃ একথা বলে টেলিভিশনে।”

 

‘‘ আপনারা দেখেছেন কি আওয়ামী লীগের আমলে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে? আওয়ামী লীগের আমলে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় নাই, হয় না। তারা সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে জানে না। গত দুইটা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জনগনের সাথে প্রতারণা করেছে। তাদের চরিত্রের মধ্যে সেটা নাই। তাদের চরিত্রের মধ্যে রয়েছে যে, দেশটা তাদের বাপের তালুকদারি, জমিদারি। ওরা রাজা আর আমরা সব প্রজাৃ এটা তারা সবসময় মনে করে।”

 

‘‘ সেই কারণে তারা সবসময় ক্ষমতা ধরে রাখতে চায় বেআইনিভাবে নির্যাতন করে, হত্যা করে, গুম করে নিষ্ঠুরভাবে। আমাদের মনে রাখতে হবে এই নির্বাচন ব্যবস্থা আওয়ামী লীগ ইচ্ছাকৃতভাবে ধবংস করে দিয়েছে, আমাদের মনে রাখতে হবে আজকে এখানে তরুন-যুবক আছে তাদের যদি অধিকার আদায় করতে হয়, একটা সুন্দর দেশ তৈরি করতে হয় সেখানে তারা চাকুরি পাবে, শিক্ষার সুযোগ পাবে, স্বাস্থ্যের সুযোগ পাবে তাহলে এই তরুণদের এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে।”

 

তিনি বলেন, ‘‘ বাংলাদেশকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে নিতে হবে। সেজন্য আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন, টেক ব্যাক বাংলাদেশ। কোন বাংলাদেশ? যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র থাকবে, মানুষের সার্বভৌমত্ব থাকবে, কাজ করে আয় করার ব্যবস্থা থাকবে, মানুষ সহজভাবে জীবনযাপন করতে পারবে। আমরা তরুণ ছেলেরা আজকে কোনো চাকুরি পায় না। বেকারত্ম বাড়ছে।”

 

‘‘ এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। এই তারুণ্যের সমাবেশে এ্কটাই লক্ষ্যে হওয়া উচিতৃ আজকে মুক্ত করতে, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে সকলকে একসাথে নামতে হবে। ফয়সাল হবে কোথায়? রাজপথে এর ফয়সালা করতে হবে।”

 

‘ডেঙ্গু পরিস্থিতি’

 

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ আজকের খবরের কাগজে দেখবেন ডেঙ্গুতে ঢাকায় এখন পর্যন্ত ১০০ জনের ওপর মারা গেছে তার মধ্যে শিশু আছে ৭০ জন। কোনো রকম কোনো ব্যবস্থা হচ্ছে না ডেঙ্গু দূর করবার জন্যে। চট্টগ্রামে আজকে একটি পরিবারেরই ৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।”

 

‘‘ সাধারণ মানুষ কোনো স্বাস্থ্যে ব্যবস্থা পায় না, সমস্ত ভঙ্গুর হয়ে গেছে। শিক্ষাখাতের কথা কি বলব, সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাদের দলীয় শিক্ষক দিয়ে পূর্ণ করে দিয়েছেন, সেখানে লেখাপড়া বলে কিছু হয় না।একইভাবে সমস্ত খাতগুলোকে লুটের স্থান করেছে।”  

 

‘বিদ্যুতখাতের লুটপাট’

 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ পত্রিকায় বেরিয়েছে যে, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ইভালুয়েশনে বিদ্যুতখাতকে বলা হয়েছে অপচুক্তি ও লুটেরা মডেল। কারা বলছে? সরকারের লোকেরা। কেনো বলছে? শুধু কেন্দ্র গুলোতে কোনো উতপাদন না করে বিদ্যুত বাবত ভাড়া দিতে হচ্ছে ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৪ হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে গোটা বিদ্যুত খাতে লোকসান দিয়েছে এক লক্ষ ৪৮ হাজার কোটি টাকা এই দুই বছরে।”

 

‘‘ আমি একটা খাতের কথা বললাম। এখন বলে রোল মডেল বাংলাদেশ। উন্নয়ন করছে তাই না। উন্নয়নে একেবারে সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশকে। ১০ হাজার টাকায় যে পদ্মাসেতু করা যেতে সেই সেতু করতে লেগেছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। আর উড়াল সেতু বানাচ্ছে, টানেল বানাচ্ছে পানির তল দিয়ে। কিন্তু আমার গরীব কৃষক তার ধানের দাম পাচ্ছে না, তার পণ্যের দাম পায় না। সারের দাম কমে না, সারের দাম বাড়তে থাকে। আর মা-বোনের এখানে আছেন তারা বাজারে গেলে তেল-লবন-ডাল-ডিম কিনতে পারেন না। কারণ দাম তিনগুন চারগুন বেড়ে গেছে।”

 

সমাবেশের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধে সর্বাধিনায়ক এমএজি ওসমানি, মুক্তিযুদ্ধের সিলেট সেক্টারের যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান, সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপি মহাসচিব।  

 

স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানীর সভাপতিত্বে যুব দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান ও ছাত্র দলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে যুব দলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ছাত্র দলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন জীবন, জেলা সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, মহানগর সভাপতি নাসিম হোসাইন, যুব দলের জাকির হোসেন সিদ্দিকী, স্বেচ্ছাসেবক দলের ফখরুল ইসলাম রবিন ও ছাত্র দলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব বক্তব্য রাখেন।

 

‘গুম’ হওয়া দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর সহধর্মিনী তাহমিনা রুশদির লুনা, ছাত্র দলের জোনায়েদ আহমেদের মা আয়েশা বেগম ও ইফতেখার আহমেদ দিনারের বোন তাহমিন শারমিন তামান্না, নবীন ভোটার সাদিয়া কাউসার রুহি, সাবিহা জামান আরিফা, ক্ষমতাসীনদের হামলায় পঙ্গু যুব দলের খালেদুর রহমান খালেদ নিজেদের মনের বেদনার কথা বলেন।

 

সমাবেশে প্রতিবাদী কবিতা আবৃত্তি করেন এম এ চৌধুরী শাহান, আরিফ উল্লাহ ও শায়মা আহমেদ অসীম।

 

সমাবেশে সিলেটের বিদায়ী মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, এনামুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা কলিম উদ্দিন মিলন, নাসের রহমান, এম এ সালাম, শাম্মী আখতার, জেলা সাধারণ সম্পাদক ইমরান আহমেদ চৌধুরী, মহানগর সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরীসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা।

 

সিলেট পৌঁছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শহরে হয়রত শাহ জালাল(রহ) ও খাদিমনগরে হযরত শাহ পরানের মাজার জিয়ারত করেন।