ঢাকা, শনিবার ২৩ই নভেম্বর ২০২৪ , বাংলা - 

‘সরকারের সূদূর প্রসারী ষড়যন্ত্র’চলছে

স্টাফ রিপোর্টার ।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2023-05-14, 12.00 AM
‘সরকারের সূদূর প্রসারী ষড়যন্ত্র’চলছে

পঁচাত্তরে নভেম্বরে তিন মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তার হত্যার ঘটনায় জিয়াউর রহমানকে জড়িয়ে মামলা দায়ের ‘সরকারের সূদূর প্রসারী রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’  বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।রোববার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘‘ একটা সম্পূর্ণ সর্বৈব মিথ্যাকে আবারও একেবারে সামনে তুলে নিয়ে এসেছে ৪৮ বছর পরে… এটা সম্পূর্ণভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সেই উদ্দেশ্যটা একটাই যে, জনগন যখন গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাবার জন্য আন্দোলন শুরু করেছে, যখন মানুষ রাস্তায় বেরুনো শুরু করেছে, যখন জাতীয়-আন্তর্জাতিকভাবে প্রবল চাপ সৃষ্টি হয়েছে সরকারের উপরে যে, একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার জন্যে।”

‘‘ সেই সময়ে এই ধরনের একটি ….. ৪৮ বছর আগের বিষয় নিয়ে সম্পূর্ণ মিথ্যা কতগুলো বিষয়কে তুলে ধরে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এর পেছনের রয়েছে ওদের(সরকার) সুদূর প্রসারী রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। এটা তারই অংশ বিশেষ।”

১৯৭৫ সালের  নভেম্বর মেজর জেনারেল খালেদা মোশাররফ বীর উত্তম, কর্নেল নাজমুল হুদা বীর বিক্রম  লেফটেন্ট কর্নেল  টি এম হায়দার বীর উত্তমকে হত্যার ঘটনার ৪৮ বছর পর গত ১০ মে ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় মামলাটি করেন কর্ণেল নাজমুল হুদার মেয়ে সংসদ সদস্য নাহিদ ইজহার খান।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ অত্যন্ত রূঢ় সত্যি হচ্ছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগী নিশিরাতের নির্বাচনের বিনাভোটের গঠিত সংসদের একজন সদস্য নাহিদ ইজহার খান সম্ভবত তার নিজের মায়ের লেখা বইটাও পড়ে দেখেননি। যেখানে তার মা নীলুফার হুদা তার লেখা ‘কর্ণেল হুদা ও আমার যুদ্ধ’ গ্রন্থে স্পষ্টভাবেই লিখে গেছেন যে, কর্ণেল হুদাকে হত্যার সময় কী পরিস্থিতি ছিলো। সেখানে উপস্থিত মানুষের জবানবন্দিই প্রমাণ দেয় সেদিন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কর্ণেল নওয়াজিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন খালেদা মোশাররফ, কর্ণেল নাজমুল হুদা এবং মেজর এটিএম হায়দারকে রক্ষা করার।”

‘‘ দায়েরকৃত মামলার বাদী নাহিদ ইজহার খানের মায়ের লিখিত গ্রন্থের ১৩৪ পাতায় সুস্পষ্টভাষায় হত্যাকান্ডের পেছনে কর্ণেল তাহের(আবু তাহের) সংশ্লিষ্টতার বিষয় উঠে এসেছে। এতে আরো উঠে এসেছে যে, কর্ণেল তাহেরের নির্দেশে হত্যাকান্ডের চারদিন পূর্ব থেকে কর্ণেল হুদাসহ অন্যান্যদের ভারতের চর হিসেবে সেনাবাহিনীতে প্রচার করেছিলো জাসদ গণবাহিনী। মেজর জেনারেল আমীন আহম্মেদ চৌধুরীর একই কথা লিখেছেন বইটির ভূমিকায়।”

তিনি বলেন, ‘‘ ইতিহাসের নির্মম পরিহাস হচ্ছে, কর্ণেল হুদার মেয়ে নাহিদ ইজহার খান যিনি ফ্যাসিস্ট ভোটারবিহীন সংসদের এমপি হিসেবে তার পিতার হত্যাকারী জাসদ-গণবাহিনীর উপপ্রধান হাসানুল হক ইনু এবং কর্ণেল তাহেরের ভাই ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল একটি সংসদের এমপি হিসেবে গলা ফাটাচ্ছেন। নিজের পিতার হত্যার হুকুমের আসামী করেছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে যিনি তার পিতাকে বাঁচানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। এমনকি তার মায়ের লেখা গ্রন্থে অভিমান করে স্বীকার করে নিয়েছেন তাদের মাথা গোঁজার ঠাই করে দিতে।”

‘‘ বস্তুত নাহিদ ইজহার খান শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে তার পিতার হুমকুম দাতা হিসেবে মামলা দায়ের করেছেন বর্তমান ফ্যাসিস্ট আওয়ামী গোষ্ঠির একজন ক্রীড়াণক হিসেবে মাত্র। এর পেছনে রয়েছে সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। যার প্রধান কারণ হচ্ছে,চলমান ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন থেকে দেশি-বিদেশী গণতন্ত্র প্রিয়  মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানো। অন্যথায় পিতার ইতিহাস স্বীকৃত জাসদ-গণবাহিনীর জীবিত কমান্ডার ইনু গংদের বাদ দিয়ে যিনি সৈনিক-অফিসার বিরোধ নিরসনে সেনা অফিসারদের জীবনবাজী রেখে দেশের বিভিন্ন সেনা ছাউনিতে ঘুরে বেড়িয়েছেন সেই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হুকুমের আসামী করে পিতার রক্তের সাথে বেঈমানি করতেন না।”

‘ষড়যন্ত্র আরো হবে’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে শেখ হাসিনা ও তার কুশীলবরা নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। এই মামলা সেই ষড়যন্ত্রের একটি ঘৃণ উদাহরণ মাত্র।”

‘‘ সরকারের তরফ থেকে আগামীতেও এই ধরনের ষড়যন্ত্র চলমান থাকবে। বিশেষ করে সরকার পতনের সময়কাল যত এগিয়ে আসবে শহীদ জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও দেশনায়েক তারেক রহমানসহ বিএনপির বিরুদ্ধে এই ধরনের ষড়যন্ত্রের মাত্রা আরো বাড়বে। আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, জনগনকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপির নেতৃত্বে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সকল ষড়যন্ত্রের জাল নস্যাত করে দেবো।”

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।