‘খেলা হবে’। ছোট্ট এই দুটো শব্দকে একসময় তুমুল জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের ডাকসাইটে রাজনীতিবিদ তথা আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমান। কার্যত তার ‘পেটেন্ট’ করা এই ছোট বাক্যটাকে নিয়েই এখন তুলকালাম সীমান্তের অন্য পারে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে। সে রাজ্যে ভোটের আগে বিজেপি, তৃণমূল, বাম, কংগ্রেস সব দলই অহরহ ব্যবহার করছে এই ‘খেলা হবে’, নানা রঙে ও নানা রূপে।
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের নাম না করেও শিরদাঁড়া ঠান্ডা করে দেওয়া হুমকির সুরেই শামীম ওসমান বলতেন, ‘খেলা হবে’। বলতেন, ‘কারে খেলা শেখান? আমরা তো ছোটবেলার খেলোয়াড়’–যে বক্তৃতার ভিডিও আজও ইউটিউব ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে আছে।
পশ্চিমবঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা নির্বাচন এপ্রিলেই, বড়জোর মাসদুয়েক পরেই। ভোটের আগে সে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবেশ ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে, নানা কারণে-অকারণে প্রতিপক্ষর উদ্দেশে হুঙ্কার দিচ্ছেন সব দলের নেতারাই। আর সেই পটভূমিতেই হঠাৎ পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিবিদদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে শামীম ওসমানের সেই পুরনো স্লোগান ‘খেলা হবে’।
এখন সে রাজ্যে ডাকসাইটে নেতারা সবাই কথায় কথায় হুমকি দিচ্ছেন ‘খেলা হবে’। এই শব্দ দুটোর সঙ্গে আগে-পরে নানা লাইনজুড়ে বাঁধা হচ্ছে রাজনৈতিক কবিতাও। মিছিলে ও পদযাত্রায় নিয়মিত স্লোগান দেওয়া হচ্ছে ‘খেলা হবে’, কেউ কেউ আরও এক ধাপ এগিয়ে বলছেন–‘ভয়ঙ্কর খেলা হবে’।
চটুল সুরে গান বেঁধে রাজনৈতিক মিটিং-মিছিলে ‘খেলা হবে’ বাজাচ্ছেন ডিজেরা, এমন ঘটনাও ঘটছে পশ্চিমবঙ্গে।
ঠিক কীভাবে ‘খেলা হবে’ সীমান্ত পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গ পাড়ি দিলো তা পরিষ্কার নয়। তবে যতদূর জানা যাচ্ছে, গত ডিসেম্বরে মেদিনীপুরের ডাকাবুকো নেতা শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করার পর নিজের খাসতালুক নন্দীগ্রামে প্রথম যে সভা করেছিলেন, সেখানেই তিনি ‘খেলা হবে’ শব্দ দুটো প্রথম ব্যবহার করেন।
তারপরই ‘খেলা হবে’ লুফে নেন বীরভূম জেলার বিতর্কিত তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল ওরফে ‘কেষ্ট’। দলের সভা সমাবেশ থেকে তিনি নিয়মিত হুঙ্কার দিতে থাকেন, ‘শুধু খেলা হবে না, ভয়ঙ্কর খেলা হবে’–ঠিক শামীম ওসমানের ঢঙেই।
এরপর থেকেই শুধু বিজেপি বা তৃণমূল নয়, পশ্চিমবঙ্গে সব রাজনৈতিক দলের নেতারাই ‘খেলা হবে’ স্লোগান দিতে শুরু করেছেন। বামপন্থী বা কংগ্রেসীরাও তাতে পিছিয়ে নেই। সম্প্রতি তার সঙ্গে যোগ হয়েছে মাইকে কান ফাটানো আওয়াজে ‘খেলা হবে’ গানের সঙ্গে উদ্দাম নাচ।
শনিবারই বর্ধমানের মঙ্গলকোটে রীতিমতো ডিজে দিয়ে ‘খেলা হবে’ গান বাজিয়ে তৃণমূল কর্মীরা উদ্দাম নেচেছেন, যেখানে ছিলেন অনুব্রত মণ্ডলও। মেদিনীপুরের ঘাটালে তৃণমূল বিধায়ক শঙ্কর দলুইও অনুগামীদের সঙ্গে নিয়ে খেলা-খেলা-খেলা হবে গানের সঙ্গে কোমর দুলিয়েছেন, সে ছবিও নিমেষে ভাইরাল হয়েছে।
স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সম্প্রতি ডাক দিয়েছেন ‘হোক না একটা খেলা’। শনিবার কুলপিতে মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো ও যুব তৃণমূলের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও ‘মাঠে নেমে খেলবো’ বলেছেন।
তৃণমূলের এমপি, মুখপাত্র তথা সিনিয়র এমপি কাকলি ঘোষ দস্তিদারও নিজের ব্যাডমিন্টন খেলার একটি ছবি টুইট করে লিখেছেন, ‘খেলা হবে। বলে বলে আউট হবে’। টুইটটা যে পুরোপুরি রাজনৈতিক, পরিষ্কার করে দিয়েছেন সেটাও।ফলে পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন নির্বাচন যে রাজনৈতিক পরিভাষায় একটা পুরোদস্তুর ‘খেলা’য় পরিণত, সেই দেয়াল-লিখন একেবারে স্পষ্ট।
সৌজন্যে আর কেউ নন, নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমান। ‘খেলা হবে’ শব্দ দুটো যে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি তার কাছ থেকেই ধার করেছে, সে কথা স্বীকার করে নিয়েছে রাজ্যের সবচেয়ে বড় খবরের কাগজ আনন্দবাজার পত্রিকাও!