ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৮ই মার্চ ২০২৪ , বাংলা - 

উল্টোপথে হাঁটছে বিমান বাংলাদেশ

স্টাফ রিপোর্টার।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2021-10-08, 12.00 AM
উল্টোপথে হাঁটছে বিমান বাংলাদেশ

সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল’ কথাটি রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থা বিমান বাংলাদেশের জন্য যেন উৎকৃষ্ট উদাহরণ। সরকার যেখানে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। সেখানে উল্টোপথে হাঁটছে বিমান বাংলাদেশ। সরকারি এই বিমান সংস্থার অনলাইন টিকেট সংক্রান্ত সেবা গত ১০ আগস্ট থেকে বন্ধ রয়েছে, পুনরায় চালু করতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, তবে তার জন্য অপেক্ষার পালা দীর্ঘ হতে যাচ্ছে। বেসরকারি সকল এয়ারলাইন্সগুলো যেখানে প্রতিদিন সেবাগ্রহণকারীদের জন্য নানা সুবিধা নিয়ে গ্রাহক টানতে ব্যস্ত, সেখানে বিমান বাংলাদেশ কর্মকর্তারা নিজেদের সুযোগ সুবিধা নিয়ে ব্যস্ত। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ডিজিটাল যুগে যাত্রীরা ঘরে বসেই টিকেট সংগ্রহসহ যাবতীয় সেবা নেট মাধ্যমে করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তাছাড়া অতিমারি করোনার মধ্যে ভিড় এড়াতেও অনলাইন সেবাই সর্বোত্তম সেবা। সেখানে প্রায় তিন মাস ধরে বিমানের অনলাইন টিকেট সংক্রান্ত ওয়েবসাইট বন্ধ রয়েছে। যা নজিরবিহীন কাণ্ড বলে উল্লেখ করেছেন সেবাগ্রহণকারীরা। তারা বলেছেন, বিশ্বের কোথাও এমন ঘটনা ঘটেনি যে কোন একটি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট মাসে পর মাস বন্ধ রেখে সংস্কার করা হয়েছে। যদি ত্রুটি থাকে সেটা সাময়িক কয়েক ঘণ্টার জন্য থাকতে পারে। আর অন্য কোম্পানির পরিবর্তন যদি করতে হয় তাহলে এই কয়েক মাস তো বিকল্প ব্যবস্থাও রাখতে পারত। এটি আসলে দায়িত্ব অবহেলা ছাড়া আর কিছু না।ওয়েবসাইট বন্ধ হওয়ার পর গত ১১ আগস্ট বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স’র উপ-মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকার গণমাধ্যমে একটি প্রেসরিলিজ পাঠান। সেই প্রেসরিলিজে লেখা ছিল ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বিশ্ব স্বীকৃত সার্ভিস প্রোভাইডারের মাধ্যমে শিগগিরই উন্নত অনলাইন সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে যাচ্ছে।’ আসলে শিগগিরই বলতে কত মাসে বা কত দিনে হয়? এর কোনো উত্তর তার জানা নেই।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সিইও) ড. আবু সালেহ মোস্তাফা কামাল বলেন, রাস্তায় বা কোথাও কোন কাজ বন্ধ হলে কি লেখা থাকে? দেখেননি সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত। আমাদের এটা বলা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। যারা কাজ করত তারা ব্যর্থ হওয়ায় নতুন একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। তারা কাজ করছে। কাজ চলমান থাকায় কিছু বলতে পারছি না। পুরোপুরি ঠিক হতে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত লাগতে পারে। তখন আর সমস্যা হবে না।

কত দ্রুত সেবাটি চালু হতে পারে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উপ-মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকার বলেন, শিগগিরই চালু হবে। তবে কবে হবে, সেটা বলতে পারছি না। তিনি প্রেসরিলিজের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। এরপর প্রতিবেদককে ওই প্রেসরিলিজ পাঠান।

আসলেই কি টেকনিক্যাল সমস্যা? নাকি বিশেষ কোনো পক্ষের সুবিধা দিতেই এমন টালবাহানা করছে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। কেননা অনলাইন টিকেট সিস্টেম চালু থাকলে জালিয়াতির সুযোগ একটু কম থাকে। বিমানে আসন ফাঁকা থাকা সত্ত্বেও সিট নেই বলে যে কথাগুলো বলা হতো সেটি বন্ধ হয় অনলাইন টিকেট ব্যবস্থা চালু থাকলে। এতে বিমান বাংলাদেশ লোকসানি প্রতিষ্ঠান থেকে লাভের মুখ দেখত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

২০১৯ সালের আগে প্রায় দশ বছর ধরে বিমানের অনলাইন টিকিট বুকিং ব্যবস্থা পরিচালনা করত জ্যাপওয়েজ নামে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতি মাসে ব্যবস্থাপনা বাবদ প্রায় ২৩ লাখ টাকা এবং নতুন কোনো কিছু হালনাগাদ হলে আরও প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা অতিরিক্ত পরিশোধ করা হতো। এই সংস্থাটি বিমানের টিকিট বিক্রি সংক্রান্ত তথ্য এবং আর্থিক হিসাবও সঠিকভাবে রাখতে পারছিল না। এ কারণে ২০১৯ সালের মে মাসে জ্যাপওয়েজেরে সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে ট্রাভেল শপের সঙ্গে চুক্তি করে বিমান। ট্রাভেল শপ একেবারে হালনাগাদ প্রযুক্তিতে পুরো ব্যবস্থা প্রতিস্থাপন করে। ফলে বিমানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাসহ মন্ত্রণালয় এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নীতিনির্ধারকরাও ড্যাশ বোর্ডের মাধ্যমে অনলাইনে প্রতিদিনের টিকিট বিক্রির হিসাব, বুকিং বাতিলের হিসাবসহ আয়-ব্যয়ের সম্পূর্ণ হিসাব দেখতে পারতেন। ফলে বিমানের টিকিট বুকিং এবং বিলম্বে ফ্লাইট পরিচালনা সংক্রান্ত অনিয়মও প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এক বছরের মধ্যেই বিমান ২৪০ কোটি টাকা লাভের মুখ দেখে। যেটা ছিল বিমানের ইতিহাসে প্রথম মুনাফা। ওই সময়ে বিমানের ১ কোটি ১২ লাখ ৪২৭টি টিকিট বিক্রি হয়েছে যার মূল্য প্রায় ১২৫ কোটি টাকা। সে সময়ে দেশীয় কোম্পানির ব্যবস্থাপনা বিলের পরিমাণ প্রায় ৯০ লাখ টাকা। অন্যদিকে বিদেশি কোম্পানি ব্যবস্থাপনায় থাকার সময়ে বিল আসত চার কোটি টাকার বেশি।

এবার ট্রাভেল শপের সাথে চুক্তি বাতিল করে বিশ্ব স্বীকৃত সার্ভিস প্রোভাইডারের সেভারের সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। চুক্তি অনুযায়ী কাজ চলছে। পুরোপুরি ঠিক হতে আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

অনলাইন টিকেট সেবা বন্ধ হবার পর প্রেসরিলিজে আরও উল্লেখ্য ছিল, বিমানের সকল দেশি-বিদেশি সেলস অফিস, অনুমোদিত ট্রাভেল এজেন্সি ও বিমান কল সেন্টারের মাধ্যমে বিমানের সকল রুটের টিকেট ক্রয়, পরিবর্তন ও ফেরত প্রদানের চলমান প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। উপরন্তু সম্মানিত যাত্রীগণকে পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্যে আগামীকাল হতে বিমানের বলাকাস্থ প্রধান কার্যালয়ের সেলস সেন্টার ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে। বিমান কল সেন্টার: ০১৯৯০ ৯৯৭ ৯৯৭, বলাকাস্থ সেলস সেন্টার: ০১৭৭৭৭১৫৬৩০-৩১ ফোন: ৮৯০১৬০০-৯ এক্সটেনশন ২১৩৫/২১৩৬, মতিঝিল সেলস সেন্টার ফোন: ২২৩৩৫৭০৭০/২২৩৩৮০১৫১ (এক্সটেনশন- আন্তর্জাতিক ১৩৬, ১৩৮; অভ্যন্তরীণ ১৪৫)।