৬৭ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ এনে ব্যাংকিং ও নন ব্যাংকিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ভ্যাট গোয়েন্দারা। একই সাথে নিবন্ধন না করে ভ্যাটযোগ্য সেবা প্রদান করায় তাদের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত ভ্যাট নিবন্ধন নেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। মূল্য সংযোজন কর আইন ১৯৯১ এর ধারা ১৫ এর উপধারা (১) অনুযায়ী করযোগ্য পণ্যের সরবরাহকারী বা করযোগ্য সেবা প্রদানকারীকে বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে নিবন্ধন গ্রহণ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
এর আগে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতরের উপ-পরিচালক নাজমুন নাহার কায়সারের নেতৃত্বে একটি দল প্রতিষ্ঠানটির ২০১১ সালের জানুয়ারি হতে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে। তদন্তকালে গ্রামীণ ব্যাংকের এই অনিয়ম বের হয়।
ভ্যাট গোয়েন্দারা জানান, তদন্তকালে প্রতিষ্ঠানটি সি.এ. ফার্ম কর্তৃক প্রত্যায়িত বার্ষিক অডিট প্রতিবেদন এবং প্রতিষ্ঠান কর্তৃক দাখিলকৃত অন্যান্য দলিলাদি আড়াআড়ি যাচাই করে তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া তদন্ত চলাকালীন প্রতিষ্ঠানের একাধিকবার আত্মপক্ষ সমর্থনে বিভিন্ন তথ্যাদি ও বক্তব্য আমলে নেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি তদন্ত মেয়াদে প্রদত্ত বিভিন্ন সেবা হতে প্রাপ্ত আয়ের বিপরীতে ৩৪ হাজার ৯১০ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ৩০ কোটি ৩৬ লাখ ৮৩ হাজার ৬০০ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত ৩০ কোটি ৩৬ লাখ ৪৮ হাজার ৬৯০ টাকা ভ্যাট ফাঁকি উৎঘাটন করা হয়। উক্ত ভ্যাট সময়মতো পরিশোধ না করায় আইন অনুসারে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মাসিক ২% হারে ১৩ কোটি ৯৯ লাখ ৯৫ হাজার ৭০৬ টাকা সুদ ধরা হয়।
প্রতিবেদনের আরও উল্লেখ করা হয়, প্রতিষ্ঠানটি তদন্ত মেয়াদে বিভিন্ন খরচের বিপরীতে উৎসে ভ্যাট বাবদ ৮ কোটি ৫৪ লাখ ২০ হাজার ৮১৯ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করে। কিন্তু তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটির উৎসে কর্তন বাবদ প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ২৩ কোটি ৯৩ লাখ ১০ হাজার ০৭৪ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত ১৫ কোটি ৩৮ লাখ ৮৯ হাজার ২৫৬ টাকা ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করা হয়। আর উক্ত ভ্যাট সময়মতো পরিশোধ না করায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মাসিক ২% হারে ৭ কোটি ২৩ লাখ ২৬ হাজার ৯৭৭ টাকা সুদ ধরা হয়।
এভাবে গ্রামীণ ব্যাংকের ৬৬ কোটি ৯৮ লাখ ৬০ হাজার ৬২৯ টাকা ভ্যাট পরিহারের তথ্য উদঘাটিত হয়। এই টাকা সরকারি কোষাগারে রাজস্ব হিসেবে আদায়যোগ্য।