ঢাকা, সোমবার ১৪ই ডিসেম্বর ২০২০ , বাংলা - 

অন্য কোন সীমান্তে মানুষ হত্যা করে না ভারত

স্টাফরিপোর্টার।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

সোমবার ১৯শে অক্টোবর ২০২০ সকাল ১১:১২:৪৮

সীমান্তে বিএসএফ (ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী) কর্তৃক বাংলাদেশিদের হত্যার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কূটনৈতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. এম শাহিদুজ্জামান। তিনি বলেছেন, ‘ভারত বাংলাদেশিদের যেভাবে হত্যা করছে, তা পাকিস্তান সীমান্তেও করে না। বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মতোই শত্রু মনে করে ভারত, যা সম্পর্কের মাপকাঠিতে অস্বাভাবিক।’ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে এমন মন্তব্য করেন এম শাহিদুজ্জামান।

তিনি বলেন, “ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী চাইলেই গুলি করতে পারবে, এমন আইন লোকসভায় পাস হয়েছে। সেটি হয়েছে রৌমারীর ঘটনাকে কেন্দ্র করে। এই আইন একটি ‘কালো আইন’, অথচ দেশটির নাগরিক সমাজও মেনে নিয়েছে। আমি দেখলাম, একজন সংসদ সদস্য আরেকজন মন্ত্রীকে পার্লামেন্টে বলেছেন, ‘আমরা আশা করছি, আপনি অবশ্যই এই আইন প্রত্যাহার করবেন না।’ মানে, সীমান্তে হত্যাকাণ্ডে আইন করে বৈধতা দেয়া হয়েছে। বিএসএফকে এই ফৌজদারি অপরাধের জন্য বিচারের মুখোমুখি হতে হয় না। মূলত, একটি রাষ্ট্রের ওপর অতিনির্ভরতার ফল এটি।”

শাহিদুজ্জামান বলেন, ‘পাকিস্তান সীমান্তেও এভাবে মানুষ হত্যা করতে পারে না ভারত। সেখানে বিশেষ উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে গোলাগুলি হয়। উস্কানি হলে উভয়পক্ষই গুলি চালায়। আর বাংলাদেশ সীমান্তে চোরাচালানের অভিযোগে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করা হয়। অথচ, এসব চোরাচালানের সঙ্গে বিএসএফ-বিজিবিও জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। হত্যার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। কৃষককেও হত্যা করছে। তার মানে, বিশেষ চাপে রাখতেই তারা এমন করে বাংলাদেশিদের হত্যা করছে। হত্যার এই মানসিকতা ভারতের সরকারগুলোর পরম্পরায় রয়েছে। একই মানসিকতা ভিন্ন ভিন্ন সরকার এলেও। এমন চিত্র পৃথিবীর আর কোথাও দেখতে পাবেন না। এমনকি ইসরায়েল-ফিলিস্তিনেও না।’

এ কূটনীতিক বলেন, ‘বাংলাদেশ-পাকিস্তান বিষয়ে ভারতের একই মানসিকতার প্রমাণ হচ্ছে কাঁটাতারের বেড়া। এ দুটি দেশের সীমানাতেই কাঁটাতারের বেড়া দেখতে পাওয়া যায়। নেপাল, ভুটান এমনকি চীনের সীমানাতেও কাঁটাতারের বেড়া নেই। মিয়ানমারের বর্ডার দিয়ে ভারতীয়রা গাড়ি নিয়েও প্রবেশ করতে পারে। চীন সীমান্তে ভারত গুলি চালাতে সাহস পায় না। লাদাখে হাতাহাতি থেকে মারামারি হলো। গোলাগুলি হয়নি। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভিন্ন নীতি।’

এই বিশ্লেষক মনে করেন, ‘বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে দুর্বল থেকে দুর্বলতর করা হচ্ছে। তারা অপ্রস্তুত। ভারী অস্ত্র দেয়া হয় না। আইন দুর্বল করা হয়েছে। ভারত সবচেয়ে বড় সুযোগ নিয়েছে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র না থাকার বিষয়টি। নির্বাচন নিয়ে বর্তমান সরকার ভারতের দ্বারস্থ। তাদের করুণা নিয়ে এই সরকার ক্ষমতায় আছে বলে যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারছে। গণতন্ত্র মজবুত থাকলে এভাবে আমাদের মাথার ওপরে ছড়ি ঘুরাতে পারত না।’

তিনি বলেন, ‘চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কোন্নয়ন এখন সময়ের দাবি। চীনকে পাশে না পেলে ভারত মিয়ানমারকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গোপসাগরের নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইবে। সেন্টমার্টিন নিয়ে মিয়ানমার ইতোমধ্যে উস্কানি দিচ্ছে। কূটনীতির এই বিষয়গুলো গুরুত্ব না দিলে বিপদ আসন্ন। চীনেরও স্বার্থ আছে, তবে সেখানে বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষিত। ভারত বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল কবজায় নিতে চায়। বিজেপি নেতাদের কথা এমনই। 

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে ভারত বিনিয়োগ করছে শত বাধার পরও। বিশেষ উদ্দেশ্য না থাকলে এমন ঝুঁকি নিত না। আর চীনের সঙ্গে এসব বিষয়ে বোঝাপড়া না থাকলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারসাম্য ফিরবে না। সর্বোপরি বাংলাদেশের রাজনীতিতে গণতন্ত্র না ফিরলে ভারতের সঙ্গে শক্ত অবস্থানে দর-কষাকষি হবে না।’