ঢাকা, শনিবার ২০ই এপ্রিল ২০২৪ , বাংলা - 

বাড়ি দখলমুক্তকরণ উন্নয়নের পথে মাইলফলক

সোহেল সানি

2021-02-28, 12.00 AM
বাড়ি দখলমুক্তকরণ উন্নয়নের পথে মাইলফলক

ব্যাপক উন্নয়ন সাধারণ মানুষের মাঝে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে। তিনি একজন সুদক্ষ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে বিদেশী রাষ্ট্রপ্রধানদের নজর কেড়েছেন। বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রশংসিত হচ্ছে। কিন্তু অভাবনীয় উন্নয়নের পরেও আওয়ামী লীগকে কেনো রাতের আঁধারে ভোট কাটার অভিযোগ মাথায় চাপাতে হচ্ছে? তাহলে কি  ২০০৯ সালে যে তুমুল জনপ্রিয়তা নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসীন হয় - সেই জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে?
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কূটকৌশলে প্রতীয়মান হচ্ছে - যে নেতারা ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনে যে জনপ্রিয়তা নিয়ে বিজয়ী হন, সেই জনপ্রিয়তায় নিজেদের ব্যর্থতার কারণেই ধস নামে। কারো কারো দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, সন্ত্রাস, স্বেচ্ছাচারিতায় গোটা দলের ওপরই মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী হলেও কমে যাচ্ছে দলের প্রতি জনগণের আস্থা।
ক্ষমতার টানা তিন মেয়াদ! শেষ মেয়াদও অতিক্রমের পথে।  মন্ত্রী-এমপিদের জনপ্রিয়তা ধস নেমেছে এটা আঁচ করতে পেরেই হয়তবা প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাচন কৌশলে কুটপন্থা অবলম্বন করতে হয়। নির্বাচন নিয়ে যে কালিমা গায়ে মাখতে হচ্ছে তা দলের নেতাদের জন্য।
দেশে শক্তিশালী বিরোধী দল থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এটি আশার কথা। যাহোক
মানুষ গণতন্ত্রের অপেক্ষা উন্নয়নকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। এ কারণে মানুষ বিরোধী দলের আন্দোলনে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তার কল্যাণেই আওয়ামী লীগ সরকারে টিকে আছে। শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ-যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগে শুদ্ধিঅভিযান চালিয়ে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করেছেন।  কৃষকলীগ, শ্রমিক লীগেও নতুন নেতৃত্ব এসেছে। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উত্তর দক্ষিণের কমিটিও ঘোষিত হয়েছে। কিন্তু সাংগঠনিক কার্যক্রম চোখে পড়ছে না।  প্রাণঘাতী করোনাও এ ক্ষেত্রে বড় একটা কারণ। সব সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডই মুখ থুবড়ে পড়ে আছে- এরকম অজুহাত দাঁড় করিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন নেতাকর্মীরা। হোমওয়ার্ক কর্মসূচি দিয়েও মানুষের কাছে নেতারা পৌঁছে যেতে পারতেন। কিন্তু সে ধরনের কোন কর্মসূচি সংগঠনগুলোর নেই। বরং বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের হত্যা ধর্ষণ ও চাঁদাবাজির মতো জঘন্য কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ায় আওয়ামী লীগের ওপর আঘাত হানছে। ইতিপূর্বে ছাত্রলীগের   ইতিহাস-ঐতিহ্যকে ম্লান করে দিচ্ছে কতগুলো ধর্ষণসহ অপ্রীতিকর ঘটনায়। বিভিন্নরকম বাধাবিপত্তির মুখেও শেখ হাসিনার ক্ষমতায় টিকে থাকার নেপথ্যে মূলত কাজ করছে  শেখ হাসিনার উন্নয়ন?
এটা ঠিক কিন্তু তারচেয়েও বড় ঠিক আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে আছে একটি বড় পদক্ষেপের জন্য।   সবচেয়ে সেই বড় পদক্ষেপটি হচ্ছে- সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার হাত থেকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়িটি অবমুক্ত করা।
আমার মতে এই দখলমুক্তির মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র নিরাপদ জীবনে ফিরে এসেছে। সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র মাঝেমধ্যে আহত হলেও অন্তত হত্যার শিকার হয়নি। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার ও বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার মধ্যে পার্থক্য যদি নিরূপণ করা হলে, তা কেমন করে করা যায়? এই পার্থক্যই বিএনপিকে বর্তমান অবস্থায় নিয়ে গেছে। আর আওয়ামী লীগ বার পার পেয়ে যাচ্ছে।
যেমন, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি-জামাত যখন বাস,দোকানপাটে পেট্রোল বোমা মারায় লিপ্ত তখন শেখ হাসিনা বিশ্বের সর্ববৃহৎ বার্ণ হাসপাতালে প্রতিষ্ঠা করেন। খালেদা জিয়ার সরকারের আমলে দেশ যখন দুনীতিতে হ্যাট্রিক করে শেখ হাসিনার নাম তখন বিশ্বের সৎ প্রধানমন্ত্রীর তালিকার শীর্ষে উঠে আসে। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি জামাত যখন কল্পনায়  মওলানা সাঈদীকে আকাশে দেখে, তখন শেখ হাসিনা মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট পাঠায়। খালেদা জিয়ার সরকার যখন বিদ্যুৎ এর খাম্বা তৈরি করে তখন শেখ হাসিনা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেন।
বিএনপি জামাত সরকার যখন সারের দাবিতে বিদ্রোহ করা কৃষকের মিছিলে গুলি করে হত্যা করে, তখন শেখ হাসিনা সরকার বিনামূল্যে সার বিতরণ করে।
বিএনপি জামাত যখন বাংলা ভাই শায়খ আঃ রহমানের আবিষ্কার করে শেখ হাসিনা তখন দেশকে জঙ্গিমুক্ত করে।
খালেদ জিয়া সন্ত্রাসীদের মদদ দেন, শেখ হাসিনা তখন সাকিব মাশরাফিদের খোঁজেন। খালেদা জিয়া যখন বলেন পদ্মা সেতু সম্ভব নয়, শেখ হাসিনা তখন তা দৃশ্যমান করেন।
বিএনপি যখন যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে এক হয়, শেখ হাসিনার সরকার তখন একেক করে তাদের ফাঁসি কার্যকর করে।  
বিএনপি ঐক্য  ফ্রন্ট যখন চিৎকার করে জনগনকে বলে মাগো তোমার একটি ভোটে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে, শেখ হাসিনা তখন বলেন, মাগো তোমার একটি ভোটে বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে (অবশ্য জনগণ এখন ভোট দিতেও আসে না)।
প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্র নয়, সাধারণ মানুষের কাছে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে আমূল বদলে যাওয়া দেশের চেহারাটা। কিন্তু এতো সরকারের এতো উন্নয়নের পরেও দল হিসাবে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বাড়েনি বরং ক্রমে কমেছে। ২০০৯ সালের নির্বাচনে টু-থার্ট মেজরিটি পাওয়া সেই আওয়ামী লীগের এখন কী আছে? নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই ভোট দিতে যায় না। সর্বশেষ দুটি নির্বাচনের চিত্র বলে দেয় নির্বাচন নিয়ে জনগণেরও আর মাথা ব্যাথা নেই। কিন্তু গণতন্ত্রের জন্য, সুশাসনের জন্য এটা আশার কথা নয়। আওয়ামী লীগকেই সবার আগে তা ভাবতে হয়।
শেখ হাসিনার ওপর ভর করে সরকার চলছে। কিন্তু দলে রয়েছে সাংগঠনিক স্থবিরতা, কোন্দল, হানাহানি, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি। সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে অসন্তোষ সৃষ্টি করে ফায়দা লোটার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে আল জাজিরা টিভিসহ বিদেশি একটি চক্র।
এই পরিস্থিতি নিয়ে সর্বাগ্রে আওয়ামী লীগকে চিন্তা করতে হবে। জনমনে সৃষ্টি মিশ্র প্রতিক্রিয়া অর্থাৎ বিভ্রান্তি বিতর্ক দূর করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। কেননা অতীতে অবৈধ ও অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা সেনাবাহিনীকেই ব্যবহার করেছে একরকম মিথ্যা প্রচার-প্রচারণা ছড়িয়ে। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি দেশে শক্তিশালী বিরোধী দল থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। নিশ্চয়ই এটি আশা কথা।
লেখকঃ সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট।