ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৮ই এপ্রিল ২০২৪ , বাংলা - 

খোঁজ মেলেনি টাকা নিয়ে পালাতক প্রকাশের

ডেস্ক রিপোর্টার।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2021-10-02, 12.00 AM
খোঁজ মেলেনি টাকা নিয়ে পালাতক প্রকাশের

এখনো খোঁজ মেলেনি ২৫০ শয্যা খুলনা জেনারেল (সদর) হাসপাতালের টেকনোলজিস্ট প্রকাশ কুমার দাসের। করোনা টেস্টের ২ কোটি ৫৭ লাখ ৫৭ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাতের অভিযোগের পর থেকে লাপাত্তা হন তিনি।২৩ সেপ্টেম্বর দুপুরের পর থেকে তিনি গা ঢাকা দিয়ে আছেন। শনিবার (০২ অক্টোবর) পর্যন্ত ১০ দিনেও তার খোঁজ মেলেনি। প্রকাশের স্ত্রী খুলনার শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট মাধবী রানী দাসও পলাতক রয়েছেন ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনা প্রকোপের পর ২০২০ সালের ৯ এপ্রিল এক অফিস আদেশে প্রকাশ কুমার দাসকে এককভাবে করোনার যাবতীয় কার্যক্রমের ইনচার্জের দায়িত্ব দিয়েছিলেন তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ। এরপর থেকে বিদেশগামীসহ সকল করোনা রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করে টাকা নিজের কাছেই রেখে দিতেন প্রকাশ চন্দ্র দাস। আর এর তদারকির দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কোনো খোঁজ রাখেননি।  

হাসপাতালের সূত্র মতে, হাসপাতালের ইউজার ফি সঠিকভাবে নিরূপনের জন্য গত ২২ আগষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। খুলনা সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদকে প্রধান করে ৫ সদস্য তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। গঠিত কমিটি ১৬ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করে। তদন্তে বেরিয়ে আসে ২০২০ সালের জুলাই থেকে চলতি (২০২১) বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত করোনা পরীক্ষার ইউজার ফি বাবদ মোট ৪ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা আদায় হলেও সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে মাত্র ১ কোটি ৬৬ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। ল্যাব টেকনোলজিস্ট ও ল্যাব ইনচার্জ প্রকাশ কুমার দাস বাকি ২ কোটি ৫৭ লাখ ৯৭ হাজার টাকা জমা দেননি। ওই টাকা কেন সরকারি কোষাগারে জমা দেননি তার জবাব দেওয়ার জন্য ২০ সেপ্টেম্বর কৈফিয়ত তলব করা হয়। কিন্তু দু’দিন অতিবাহিত হওয়ার পর ২৩ সেপ্টেম্বর দুপুরের পর থেকে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব:) প্রকাশ কুমার দাস গা ঢাকা দেন।  

এ ঘটনায় খুলনা সদর থানায় জেনারেল হাসপাতালের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট প্রকাশ কুমার দাসের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে খুলনার সিভিল সার্জন ডা: নিয়াজ মোহাম্মদ ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে একটি সাধারণ ডায়রি করেছেন। যার নম্বর-১৬০১, তারিখ-২৭/৯/২১ইং।

অভিযোগ রয়েছে স্বাস্থ্য খাতের কর্তাব্যক্তিরা মাত্র একটি জিডি করা ছাড়া তেমন কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় ধরা ছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছেন প্রকাশ কুমার। ১০ দিনেও মেলেনি তার কোনো খোঁজ।  
খুলনা সিভিল সার্জনের দায়ের করা জিডি ও লিখিত অভিযোগটি ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এখন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নির্দেশনার অপেক্ষায় আছে, অনুমতি স্বাপেক্ষে মামলা দায়ের করা হবে।  

এদিকে ২০১৭ সালে শহীদ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে আড়াই লক্ষ টাকার সরকারি ওষুধ চুরির অভিযোগে প্রকাশ কুমার দাসের স্ত্রী ফার্মাসিস্ট মাধবী লতাকে অভিযুক্ত করেছিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যা হাসপাতালের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উঠে আসে। যদিও এ ঘটনায় রহস্যজনকভাবে তখন তার বিরুদ্ধে কোনো বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) খুলনার সভাপতি অ্যাডভোকেট শামীমা সুলতানা শীলু বলেন, বিষয়টি শুনে আমি আশ্চর্য হয়েছি। তাহলে তখন যে কমিটি ছিল তারা দায়িত্ব পালন করেনি। কোটি কোটি টাকা নিয়ে একজন কর্মচারী কীভাবে পালিয়ে গেল তা তদন্ত করা হোক। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও অবিলম্বে অভিযুক্তকে গ্রেফতার পূর্বক তার শাস্তির ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছি।  

খুলনা বিভাগীয় (স্বাস্থ্য) পরিচালক ডা. জসিম উদ্দিন হাওলাদার  বলেন, দুদককে বিষয়টি জানানো হয়েছে, তারা তদন্ত করছে। বিষয়টি স্বাস্থ্যের ডিজিকেও জানানো হয়েছে তিনি যে পদক্ষেপ নিতে বলবেন তাই করা হবে। প্রকাশ যাতে দেশ ত্যাগ করতে না পারে সে বিষয়ে পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে।