ঢাকা, শুক্রবার ২৯ই মার্চ ২০২৪ , বাংলা - 

লকডাউনে অসহায় মানুষ’ আরো অসহায়

স্টাফ রিপোর্টার।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2021-06-30, 12.00 AM
লকডাউনে অসহায় মানুষ’ আরো অসহায়

মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত লকডাউন গভীর চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে অসহায় নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের কপালে। বিশেষ করে দিন আনে দিন খায় মানুষের ভিতরে এই চিন্তার ভাজ চরম আকার ধারণ করেছে। করোনার শুরু থেকেই সবচেয়ে সংকটে ছিল এই মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষগুলো।গত সোমবার (২৮ জুন) থেকে শুরু হওয়া আংশিক লকডাউন এবং বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) থেকে শুরু হওয়া কঠোর লকডাউনের খবরে এই অসহায় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। এক দিকে যেমন তাদের আয় কমেছে অন্য দিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, চিকিৎসা,পরিবহন সহ বিভিন্ন ব্যয় দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে পরিবারের খাবার ও বাসাভাড়া নিয়ে দুশ্চিন্তার যেন শেষ নেই তাদের। আর্থিক চাপ সামাল দিতে গিয়ে অনেকের জমানো টাকা কিছু থাকলেও তা শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। পরিস্থিতি এমন যে কোন উপায় না দেখে অনেকে এরই মধ্যে রাজধানী ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। আবার অন্যদিকে অনেকে গ্রামে গিয়েও পড়েছেন নতুন সংকটে।

বুধবার (৩০ জুন) রাজধানীতে ঘুরে তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, লকডাউনে কর্মহীন অবস্থায় কীভাবে তারা পরিস্থিতি সামাল দিবেন তা ভেবে অনেকেই চোখে অন্ধকার দেখা শুরু করেছেন।

দিনমজুর আনিস মিয়া জানান, 'করোনার শুরু থ্যেইকাই আমরা ঠিকমত কাম পাই না এখনতো আরো পামু না। বউ বাচ্চা কি খাইবো আমরা কি খামু। দ্যেসে কি হইলো আল্লাই ভালো যানেন। অ্যামগোরে চিন্তা কইরা কেউ যদি কিছু দিত ভালো হইতো। এমনিতে সরকার যা দেয় তা দিয়ে নিজে চলন যায়।পরিবার তো আর চালানো যায় না।'
কপালে চিন্তার ভাঁজ দিনমজুরদের

নিউমার্কেট এলাকায় রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রিকশা চালক জসিম বলেন, 'সরকার তো শুধু মারতেছে গরিবরে রিকশা নিয়ে বাইর না হইলে খামু কি? না খাইয়া মইরা যামু মনে হয়। আমরা এই এই রিকশা চালাইয়া কিছু কামাইয়া নিজে খাই বাড়িতে পাঠাই। এখনতো দেখছি বাড়িতে পাঠামু কি নেজেই তো ঠিকমত খাইতে পারমু না। যারা বিত্তবান তারা তো জমানো টাকা খরচ করবে, আমাদের তো জমানো টাকা নেই, নিজেরাই খামু কি আর পরিবারে পাঠামু কি। এই চিন্তায় আমরা সব রিকশাওয়ালারা কোন উপায় খুইজ্যা পাইতাছি না। লকডাউনে সরকার আমাদের খাওন দিত তাহলে আমরা ঘর থেকে বের হইতাম না।
রিকশা নিয়ে বাইর না হইলে খামু কি?

ফ্লাক্সে করে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রেতা সবুর আলী বলেন, 'বাবা; হামরা হইলাম গরিব মানুষ, দিন আনি দিন খাই। চায়ের ফ্লাক্স নিয়ে বাইরে বেরুতে না পারলে খামু কি, আমাগোর তো আর জমানো টাকা নেই যে বইয়া বইয়া কামু। বউ বাচ্চা লইয়া না খাইয়া থাইকা কি লকডাউন পালন করমু?'

বসুন্ধরার সামনে জুতা সেলাই করেন মুচি আইনুল মিয়া। এবার লকডাউনে কেউ বের হতে পারবে না জেনে অনেকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি জানান, 'মাইনসে বের না হলে আমরা বের হইয়া কিকরমু। বাড়িও যাইতে পারমু না, বের ও হইতে পারমু না। একলা হইলে না চলা যায় কিন্তু বউ পোলাপাইন লইয়া কেমনে চলুম? যে কাম করি তাতে সংসার চলে না ঠিক মত ট্যাহা জমামু ক্যামনে যে লকডাউনে বইয়া বইয়া চলমু। বাড়ির গিন্নিরেও কাজে যেতে বারণ করছে মালিক, জানি না কপালে কি আছে এবার।'
মুচি আইনুল মিয়া, গিন্নিরেও কাজ নাই আমরাও কাজ বন্ধ খামু কি?

আজিমপুর কবরস্থানের সামনে সাহায্যের আশায় বসে অপেক্ষা করছেন অনেক অসহায় মহিলা। তারা বলেন, 'মাইনসে বেইর না হইলে আমগোরে সাহায্য দিবো ক্যামনে। আগের বেলা রাস্তায় খাওন, ট্যাহা পয়সা দিত, বাইরে না আইলে এইবার নিমু ক্যামনে। জানি না এই বার কি হইবো অ্যামগোর আল্লাহ জানেন। আল্লাই অ্যামগোরে সাহায্য করবেন।'
 
সাহায্যের আশায় বসে অপেক্ষা করছে অসহায় নারীরা

উল্লেখ্য, করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সোমবার থেকেই কঠোর লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। তবে বাজেট অধিবেশন ও ব্যাংকের জুন ফাইনালের কারণে শনিবার সে অবস্থান থেকে সরে আসে কর্তৃপক্ষ।

এদিন সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক ভার্চুয়াল সভায় সিদ্ধান্ত হয়, সোমবার থেকে দেশজুড়ে দেয়া হবে আংশিক লকডাউন। আর বৃহস্পতিবার থেকে দেয়া হবে এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউন।

এ সময় অনুমোদিত কারণের বাইরে কেউ রাস্তায় বের হলে গ্রেফতার করা হবে বলেও পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এমন কি সঙ্গত কারণ ছাড়া অকারণে কেউ যদি ঘর থেকে বের হয়, তবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করা হবে। তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২৬৯ ধারায় মামলা দিয়ে তাকে আদালতে পাঠানো হবে। আবার আদালতে না পাঠিয়ে মোবাইল কোর্ট দিয়ে তাদের তাৎক্ষণিক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। এই ধারায় সর্বোচ্চ ৬ মাসের জেল, অর্থদণ্ড ও উভয় দণ্ড হতে পারে বলেও জানান হয় পুলিশের পক্ষ থেকে।