ঢাকা, বুধবার ২৪ই এপ্রিল ২০২৪ , বাংলা - 

বিএফইউজে নির্বাচন:মিডিয়া পাড়া গরম

ফেসবুক থেকে নেয়া।। ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2021-06-22, 12.00 AM
  বিএফইউজে নির্বাচন:মিডিয়া পাড়া গরম

বিএফইজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় মিডিয়া পাড়া এখন সরগরম। কারা প্রার্থী হবেন, কয়টি প্যানেল হচ্ছে, কে কোন প্যানেলে যোগ দেবেন এসব নিয়ে আলোচনার ফুলঝুরি উড়াচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকরা। মহাসচিব পদে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ নিয়ে এখন পর্যন্ত চারজন সাংবাদিক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা হচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আবদুল মজিদ, নাগরিক টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক দিপ আজাদ, দৈনিক কালের কন্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি লায়েক উজ্জামান এবং বিএসএসের সিনিয়র রিপোর্টার সাবেক কোষাধ্যক্ষ আতাউর রহমান।
তবে ধোঁয়াশা রয়েছে সভাপতি প্রার্থীতা নিয়ে। তাই সম্ভাব্য প্যানেল গঠনের বিষয়টিও ধোঁয়াশাচ্ছন্ন। বর্তমান সভাপতি মোল্লা জালাল প্রার্থী হবেন না বলে তার সমর্থক ও ঘনিষ্ঠজনদের জানিয়ে দিয়েছেন। একই রকম ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল।
গত তিন সপ্তাহ যাবত যারাই তার সঙ্গে কথা বলেছেন তাদেরকেই তিনি নির্বাচন করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।  অথচ গত তিন চারদিন যাবত শোনা যাচ্ছে তিনি নাকি নিমরাজি। ”অনেকেই আমাকে বলেছেন, সবাই যেহেতু চায় তাই নতুন করে ভাবতে হচ্ছে,” এরকম কথা তিনি কয়েকজনকে বলেছেন বলে প্রেসক্লাব অঙ্গনে সাংবাদিকরা বলাবলি করছেন। প্রথমে মহাসচিব, মাঝখানে কিছুদিন সভাপতি অথবা মহাসচিব এবং ইদানিং খোলামেলাভাবে সভাপতি পদে নির্বাচন করবেন বলে ঘোষণা দিয়ে বেড়াচ্ছেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আবুজাফর সূর্য। তবে গতকাল তিনি অনেককে বলেছেন, ”যদি অশোক চৌধুরী সভাপতি পদে দাঁড়ায় তাহলে আমি মহাসচিব পদে নির্বাচন করবো না। তার সঙ্গে মুখোমুখী হবো না। অশোক দা না দাঁড়ালে অবশ্যই সভাপতি পদে নির্বাচন করব।” তবে অশোক চৌধুরী নির্বাচন করবেন না বলেই তার সমর্থক ও মিত্রদের বলেছেন।
অন্যদিকে বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব ওমর ফারুক আবারও সভাপতি পদে নির্বাচন করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে এই প্রার্থীদের ‘যদি,’ ’কিন্তু’ এখনো শেষ হয়নি। ওমর ফারুক বলছেন, ”যদি বুলবুল ভাই সভাপতি পদে নির্বাচন করেন তাহলে আমি তার মুখোমুখী হবো না। সেক্ষেত্রে মহাসচিব পদে নির্বাচন করবো। বুলবুল ভাই না দাঁড়ালে অবশ্যই আমি সভাপতি পদে দাঁড়াবো।” সেপ্টেম্বরে নির্বাচন হবে ঘোষণা আসার পর থেকেই সভাপতি পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে সমর্থনের জন্য তদবির করছেন সাবেক মহাসচিব আবদুল জলিল ভুঁইয়া। তবে জোড়ালো সমর্থন না থাকায় ইদানিং তিনি নির্বাচনী প্রচারণা থেকে সড়ে গেছেন। তিনি এখন একটি সরকারি পদ নিয়ে বিদেশে চলে যাওয়ার তদবিরে ব্যস্ত আছেন বলে কথাবর্তা হচ্ছে।
জাতীয় প্রেসক্লাব নির্বাচনের রাগ, ক্ষোভ ও দলাদলি এবারের বিএফইউজে নির্বাচনে বড় প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে। জাতীয় প্রেসক্লাবে দ্বিতীয় দফায় নির্বাচন করার সুযোগ থাকলেও সভাপতি সাইফুল আলমকে সরিয়ে দিয়ে ক্লাবের সভাপতিপদে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিলো সাবেক মহাসচিব ফরিদা ইয়াসমিনকে। ফরিদা ইয়াসমিন বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধিন বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক নঈম নিজামের সহধর্মীনি। প্রেসক্লাবে ফরিদার মনোনয়ন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে নঈম নিজাম তথা ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের বড় ভূমিকা ছিলো বলে মনে করা হয়। এরফলে মনোক্ষুণ্ণ হয়েছে যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম। প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচনের জন্য আগ্রহী ছিলেন দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত (ক্লাবের সাবেক কোষাধ্যক্ষ) এবং দৈনিক সমকালের নগর সম্পাদক (ক্লাবের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক) শাহেদ চৌধুরী। কিন্তু তাদেরকে মনোনয়ন না দিয়ে সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিলো প্রেসক্লাবের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ওমর ফারুককে। এসব কারণে বঞ্চিতরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। সেই ক্ষোভের বহিপ্রকাশ ঘটতে পারে এবারের নির্বাচনে। বসুন্ধরা গ্রুপের মিডিয়া অধিকর্তাদের তৈরি করে দেওয়া প্যানেলের বিরুদ্ধে যমুনা গ্রুপের মিডিয়া কর্তাদের প্রকাশ্য বা নেপথ্য অবস্থান থাকতে পারে। পুরোনো অনেকগুলো দ্বন্দ্ববিবাদের যোগসূত্র একোত্রিত হয়ে এবারের নির্বাচনের আগে সাংবাদিক অঙ্গনে দুটি প্রতিদ্বন্দী বলয় গড়ে উঠেছে। একদিকে আছেন বিএফইউজের সাবেক সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীর নেতৃত্বে মনজুরুল আহসান বুলবুলসহ কিছু পুরোনো নেতা। যার সঙ্গে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কারণে যুক্ত হয়েছেন বসুন্ধরা গ্রুপের শক্তিতে শক্তিমান নঈম নিজাম।
শোনা যাচ্ছে ইকবাল সোবহান চৌধুরী, মনজুরুল আহসান বুলবুল এবং নঈম নিজামের প্রভাব বলয়ের অধিনে একটি নির্বাচনী প্যানেল হবে। প্রতিদ্বন্দী অপর একটি প্যানেল হবে প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শফিকুর রহমান এমপি, মোল্লা জালাল, সাইফুল আলম এবং শ্যামল দত্ত বলয়ের সমর্থনপুষ্ট। দুই প্রভাব বলয়ের বাইরেও একাধিক প্যানেল হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
এদিকে মনজুরুল আহসান বুলবুলের সস্মতি অনুযায়ী তাকে সম্ভাব্য সভাপতি হিসেবে রেখে একটি প্যানেলের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। এই প্যানেলে মহাসচিব হিসেবে আছেন দিপ আজাদ, সহ-সভাপতি মধুসুদন মন্ডল, কোষাধ্যক্ষ্য খায়রুজ্জামান কামাল, যুগ্ম-মহাসচিব বরুণ ভৌমিক নয়ন এবং দপ্তর সম্পাদক সেবিকা রাণী।
এই প্যানেল চুড়ান্ত করার আগে সম্ভাব্য অন্যান্য প্রার্থী এবং নেতৃস্থানীয় কারও সঙ্গে আলোচনা না করায় অনেকেই ক্ষুব্ধ। ফলে মনজুরুল আহসানের সমর্থক একটি বড় অংশ প্রকাশ্যে তার বিরোধীতায় নামার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এই বাস্তবতায় প্যানেলটিতে কিছু পদে রদবদল হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে।
তাছাড়া নঈম নিজামের সঙ্গে কথা না বলে এবং তার সমর্থিত সম্ভাব্য সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীকে যুক্ত না করে প্যানেল তৈরির এই ঘোষণা মোটেই টেকসই নয় বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে এসব ঘোষণাকে কেউ কেউ বায়বীয় বললেও এগুলো প্রেসক্লাবের বিভিন্ন টেবিলে আলোচনার খোরাক জোগাচ্ছে।
সহ-সভাপতি পদে নির্বাচন করবেন বলে ইতোমধ্যে যারা ঘোষণা দিয়েছেন তারা হলেন বিএফইউজের সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব অমিয় ঘটক পুলক, সাবেক কোষাধ্যক্ষ মধুসুদন মন্ডল, সাবেক সদস্য মফিদা আকবর এবং আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রচার সম্পাদক ওবায়দুল হক খান।
বিএফইউজের বর্তমান সহ-সভাপতি সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা নির্বাচন করবেন না বলে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছেন। যুগ্ম-মহাসচিব হিসেবে প্রচারণায় আছেন ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের সাবেক সভাপতি নাসিমা আক্তার সোমা, বিএফইউজের বর্তমান দপ্তর সম্পাদক বরুণ ভৌমিক, আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মানিক লাল ঘোষ এবং সমাজকর্মী আশীষ কুমার দে।
কোষাধ্যক্ষ পদে প্রচারে আছেন বিএফইউজের সাবেক কোষাধ্যক্ষ খায়রুজ্জামান কামাল, নির্বাহী সদস্য শেখ মামুন (যুগান্তর) এবং বিএসএসের সিনিয়র রিপোর্টার আবু সাঈদ। তবে শেখ মামুন কোষাধ্যক্ষ পদে নির্বাচন করবেন কিনা এ নিয়ে দোলাচালে আছেন। তিনি কখনো কখনো বলছেন যুগ্ম-মহাসচিব পদে করবেন, কখনো বলছেন আসন্ন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে দাঁড়াবেন।
দপ্তর সম্পাদক পদে প্রার্থী হতে চান হেমায়েত হোসেন, রেজাউল করিম রেজা, সেবিকা রাণী, শাহ আলম ডাকুয়া, মাসুমসহ অনেকেই প্রচারণায় আছেন। লেখক,সিনিয়র সাংবাদিক আহমেদ রাজু ।