ঢাকা, শুক্রবার ২৯ই মার্চ ২০২৪ , বাংলা - 

‘ভাড়া কম,অগ্রীম নেই’,তবুও মিলছে না ভাড়াটিয়া!

স্টাফ রিপোর্টার।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2021-05-29, 12.00 AM
‘ভাড়া কম,অগ্রীম নেই’,তবুও মিলছে না ভাড়াটিয়া!

মহামারি করোনা যেন সবার মত ঢাকা শহরের বাড়িওয়ালাদের মাথায় চিন্তার ভাজ ফেলেছে। অ্যাডভান্স কিংবা ভাড়া কমিয়ে দিলেও মিলছে না ভাড়াটিয়া। সুসজ্জিত ডেকোরশন করা ফ্ল্যাট থেকে শুরু করে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য টিন সেড বাসা ভাড়া দেওয়া মালিকরা যেন বিপদে পড়েছেন। ভাড়াটিয়া না পেলেও তাদের ঠিকই দিতে হচ্ছে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির বিল। ভাড়াটিয়া পাওয়ার আশায় আগে কখনও এভাবে ভাবতে হয় নি তাদের। ঢাকা শহরের অলিতে গলিতে এখন শুধু টু-লেট আর টু-লেট।

হঠাৎ করে করোনায় চাকরি চলে যাওয়ায় কিংবা বেতনের পরিমাণ কমে আসায় অনেকেই তাদের সাজানো গোছানো বাসা ছেড়ে উঠেছেন ম্যাচে বা সিঙ্গেল রুমে। শিক্ষার্থীদের মাঝেও এর প্রভাব পড়েছে। সরকারি-বেসরকারি নিয়োগ বন্ধ থাকায় চাকরির বয়স নিয়ে চিন্তা করে অনেকে একে বারে চলে গেছেন গ্রামে।

ফলে এর প্রভাব পড়েছে বাড়িওলাদের ওপর। কোনভাবেই যেন তারা তাদের খালি বাসা পূর্ণ করতে পারছেন না। তেজগাঁও নাখালপাড়া এলাকার বাড়িওয়ালা আল আমিন। প্রায় ছয় মাস হয়ে গেল তিনি তার বাসার চারটি ফ্ল্যাট ভাড়া দিতে পারছেন না। এর মধ্যে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়েছিলেন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া কিছু শিক্ষার্থীদের কাছে কিন্তু গেল বছরের শেষের দিকে করোনা বেড়ে যাওয়ায় তারা বাসা ছেড়ে দিয়ে সব মালামাল নিয়ে বাড়িতে চলে যান।
বাড়ির সামনে কিংবা গলির মুখে ঝুলছে অসংখ্য টু-লেট

আবার আসলে ভাড়া নিবে বললেও তাদের আর কোন খবর নাই। অন্য একটি ফ্ল্যাটে ফ্যামিলি নিয়ে ভাড়া থাকতেন বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করা এক ভদ্রলোক। কিন্তু চাকরি হারিয়ে তিনিও বাসা ছেড়েছেন। অনেক জায়গায় টু-লেট টাঙ্গিয়েও তিনি পাচ্ছেন কোন ভাড়াটিয়া। টু-লেটের মধ্য ভাড়া কম এমন কি অ্যাডভান্স লাগবে না লেখলেও আজও পর্যন্ত কেউ কল দেইনি বলে জানান তিনি।রাজধানীর আজিমপুর, লালবাগ, মালিবাগ, বিজয়নগর, মিরপুর, খিলগাও রামপুরা বাসাবো, হাতিরপুল, ধানমণ্ডি, ফকিরাপুলসহ আরও অনেক এলাকা ঘুরে ঘুরে দেখা গেছে, বাড়ির সামনে কিংবা গলির মুখে ঝুলছে অসংখ্য টু-লেট।

শুধু উচ্চ-বিত্ত নয়, তুলনামুলক নিম্ন মধ্য-বিত্ত মানুষদের যে সব এলাকায় বসবাস, সেসব এলাকায়ও টু-লেটের অভাব নেই। অনেক ক্ষেত্রে আট নয় মাস ধরে ভাড়াটিয়া মিলছে না বাড়িওলাদের।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনায় আয় কমে গেলেও বাসা মালিকরা তাদের ভাড়া কমাচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে বাসা ছেড়ে দিয়ে কম ভাড়ার বাসা খুঁজতে হচ্ছে তাদের।

মিরপুর এলাকার এক বাড়িওয়ালা জানান, বাড়ি থাকলে অনেকে ভাবেন টাকার অভাব নেই কিন্তু তারা এটা বুঝতে চান না যে ভাড়াটিয়া না থাকলেও দিতে হয় গ্যাসের বিল পানির বিল। এগুলো ঠিক মত না দিলে তো আবার লাইন কেটে দিবে। কয়েক মাস হয়ে গেলেও ভাড়াটিয়া পাইনি। সামনে পাব কিনা তাও নিশ্চিত নয়। টু লেট টাঙ্গানো আছে, দেখি কি হয়!

হাতিরপুল এলাকার এক বাড়িওয়ালা বলেন, আগে টু-লেট থেকে কেউ কল দিলে, বাড়ির সুবিধা -অসুবিধার কথা জিজ্ঞেস করতেন কিন্তু এখন কল দিলে আগে ভাড়ার কথা জিজ্ঞেস করেন। বেশির ভাগই ভাড়ার কথা শুনে কিছু না বলে ফোন কেটে দেন। দেখতে ও আসেন না।

মতিঝিল আরামবাগ এলাকার এক বেসকারি চাকরিজীবী বলেন, বাণিজ্যিক এলাকা হওয়ায় এদিকে অনেক সময় ব্যচেলর ম্যাচে সিট পেতে কষ্ট হয়ে যেত, আর এখন দেখেন প্রায় সব খালি। টু-লেট আর টু-লেট। কয়েকদিন আগে বাস ট্রেন বন্ধ থাকায় অনেকে বাড়িতে যেতে না পারলেও, এখন অনেকে বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
টু-লেট আর টু-লেট

বাসাবো এলাকায় ঢুকতে পাশের গলিতে অনেক গুলো টু-লেট টাঙ্গানো। আগে এখানে ব্যচেলর বা ফ্যামেলি বাসা খোঁজার লোকের অভাব থাকতো না কিন্তু সরজমিনে এখানে দেখা যায়, তেমন কেউ নেই। ফ্যামেলি বাসা খুঁজতে আসা এক জনের সাথে কথা বললে তিনি জানান, অনেক কয়েকটা নাম্বারে কথা বলেছি কিন্তু ভাড়া নিয়ে কোন বাড়িওয়ালা ছাড় দিতে চান না।তাই ভাবছি কামরাঙ্গীর চরের দিকে যাব, শুনেছি সে দিকে বাসা ভাড়া অনেক কম।

অন্যদিকে শান্তি নগর থেকে হাজারীবাগ বাসা পরিবর্তন করা এক ভাড়াটিয়া জানান, আগে শান্তিনগরে একটানা ছয় বছর ভাড়া ছিলাম, হঠাৎ করোনা বেড়ে যাওয়ায় আয় কমে গেছে ফলে ছেলে মেয়েদের মুখের দিকে তাকিয়ে বাড়িতে না গিয়ে হাজারীবাগে একটা দুইরুমের বাসা নিয়েছি ১০ হাজার টাকায়। স্বাভাবিক ভাবে এই বাসার ভাড়া ১৪ হাজার হলেও অনেক অনুরোধ করে ভাড়া কমিয়েছি। আগের বাসার মালিক এখনও ফোন দিয়ে আক্ষেপ করে অনেক অনুযোগ করেন।

রাজমিস্ত্রীর কাজ করা ঢাকা মগবাজারে টিন সেট বাসায় তিন ছেলে মেয়ে নিয়ে ভাড়া থাকা মকবুল জানান, করোনা শুরু হওয়াতে বউয়ের বাসা বাড়িতে বুয়ার কাজ ছুটে যায়, আমারও আগের মতো কাজ হয় না। ওইদিকে আবার বাসা মালিক বাসাভাড়া মাফ করা দূরে থাক এক টাকা কম নিবে না বলে জানায়। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়ে ফ্যমিলি গ্রামে পাঠিয়ে দেই। এখন কম টাকায় ম্যাচে উঠছি।

উল্লেখ্য, গত বছরের মার্চে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয় দেশে। এর দফায় দফায় বেড়ে যাওয়ায় সরকার লকডাউনসহ প্রয়োজনীয় অনেক বিধিনিষেধ জারি করে। ফলে ছোট বড় অনেক পেশার সাথে জড়িত মানুষের আয়ের ওপর প্রভাব পড়তে থাকে। ইচ্ছা থাকা না শর্তেও মানুষ কিছুটা বাধ্য হয়ে স্বপ্নের ঢাকা শহর ছেড়ে পাড়ি জমায় গ্রামে। যার প্রভাব পড়ে ঢাকার বাড়িওয়ালাদের ওপর।